কালের ঢোল:- ভোলাভুলি। সিলেটি সংস্কৃতির অন্যতম উপাদেয় অনুষঙ্গ ভোলাভুলি। বাংলা অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিনে ‘ভোলাভুলি’ উৎসবের দিন পালন করত অবহমান বাংলার সিলেট অঞ্চলের মানুষ। এ দিনটি ঘিরে একসময় গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো। উদযাপনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতো গ্রামের শিশু, কিশোর তরুণ-তরুণীরা। সেই সাথে গ্রামীণ হাটগুলোতে বসতো কুমাড়দের হাতের তৈরী বিভিন্ন রকমের মাটির খেলনার মেলা।
এসময়টায় চারিদিকে ধান কাটার ধুম পড়ে যেত; বাড়ি ভরে যেত ফসলের ঘ্রাণে। কলা গাছের পাচল দিয়ে আশ-পাশের বাড়ির, দাদা-দাদি, ভাবী, দোলাভাই এসব রস সম্পর্কের মানুষদের পেটানোর হিড়িক পড়ে যেত। কে কাকে পেটাবেন এ নিয়ে রস-ঢংয়ের হুলুস্থুল লাগত।
ভোলাভুলির বিশেষ অংশ জুড়ে থাকতো মিনিভোজ বা ট্রিট যা তখনকার সময়ে ‘টুফাটুফি’ খাওয়া বলা হত। গ্রামের শিশু-কিশোররা একত্রিত হয়ে নতুন ধানের চাল দিয়ে আয়োজন করা হত টুফাটুফি রান্না। বড়রা এসেও যোগ দিতেন এ আয়োজনে। ছোট-বড়দের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ ছিল না, সবাই মিলেমিশে আনন্দে মেতে ওঠতো। ছোটবেলায় আমরা পাড়ার ছেলে-মেয়েরা ভোলাভুলিতে খুব মজা করতাম, সেই দিনগুলিই যেন আজ স্মৃতির পাতায় নাড়া দেয়।
কালের পরিক্রমায় ভোলাভুলি উৎসব পালনের সংস্কৃতি এখন প্রায় হারিয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বর্তমান প্রজন্মের কাছে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ‘ভোলাভুলি’ সংস্কৃতি একটি অপরিচিত নাম হয়ে ওঠেছে! ভোলাভুলি কেবল উপভোগ্য সংস্কৃতি নয়, এর ভেতর দিয়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন তৈরি হতো।
কার্যত সংস্কৃতি হচ্ছে একটা জাতির একমাত্র নিজস্বতা যা অন্যদের থেকে আলাদা করে চেনায়। পুঁজিবাদের আগ্রাসনে বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ক্রমাগত হারিয়ে যেতে বসেছে। অতএব এখনই সময় ঘুরে দাড়াবার- ‘জেগে ওঠো বাংলাদেশ, জেগে ওঠো নিজস্ব সংস্কৃতিতে।’
More News Of This Category