নিজস্ব প্রতিবেদক:- সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি ফের অবনতির দিকে। সড়ক ডুবে যাওয়ায় বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোর অনেক এলাকাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল সুরমা নদীর পানি উপচে প্রবেশ করতে শুরু করে সিলেট নগরীতে।
সুরমা নদীর তীর উপচে পানি প্রবেশ করেছে সিলেট নগরীর উপশহর, সোবহানিঘাট, কালিঘাট, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, কুশিঘাট, শেখঘাট, তালতলা, কাজিরবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, সাগরদিঘির পাড়, পাঠানটুলা, লন্ডনি রোড, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, চাঁদনীঘাট, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্তখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়া সহ আরও কিছু এলাকায়। এসব এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাটে ও ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি।
এ অবস্থা চলতে থাকলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে মনে করছেন নগরের বাসিন্দারা। অনেকে বাসা-বাড়িতে পানি ওঠার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছেন। যেসব রাস্তা-ঘাটে বিগত দিনে বন্যায়ও পানির দেখা পায়নি। সেসব সড়কে, হাঁটু থেকে কোমর পানি জমেছে। বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি- দোকানপাটে পানি উঠে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
ছড়ারপাড়ের বাসিন্দা আরাফাত হোসেন সিয়াম সাংবাদিকদের বলেন, ছড়ার পানি চালিবন্দর-ছড়ারপাড় সড়কে উঠে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন কলোনীতে এরইমধ্যে পানি উঠে গেছে। তাছাড়াও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে পানি উঠে গেছে। মানুষজন আতঙ্কে বাসা-বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তাছাড়া দিনমজুর ও কলোনীর নিম্ন আয়ের মানুষদের অন্যত্র আশ্রয়ে সুযোগ না থাকায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে।
সূত্র জানায়, সুরমা-কুশিয়ারা, লোভা, সারি ও দলাই নদীর পানি ৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার প্রতিবেদন অনুযায়ী কানাইঘাটে সুরমার পানি ১৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি না থাকলেও গতকালের চেয়ে ওই পয়েন্টে আজ আরও ১৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। সিলেটে সুরমার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উৎসমুখ আমলশীদে কুশিয়ার নদীর পানি ১৩০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে। সিলেটের বিয়ানীবাজার শেওলা পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি ৩৫ সেন্টিমিটার উপরে, সারি নদীতে ২ সেন্টিমিটার, লোভা ছড়ায় পানির গতি প্রবাহ ১৪.৬৫ সেন্টিমিটারে প্রবাহমান রয়েছে।
জানা গেছে, বরাক মোহনা থেকে উৎপত্তিস্থল লেকে সুরমা নদীর ২৪৯ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল দৈর্ঘ্যের নদীটি সিলেট নগরের বুক চিড়ে সুনামগঞ্জ জেলার বাউলাই নদীর মোহনায় গিয়ে মিশেছে। শুষ্ক মৌসুমে সুরমার তলদেশ চারণ ভূমিতে পরিণত হয়। যে নদী দিয়ে একসময় জাহাজ চলতো। সেই সুরমার বুকে শুষ্ক মৌসুমে খেলার মাঠে পরিণত হয়। আর ঘন ঘন সেতু দিয়ে নদী শাসন করায় এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে নদীর তলদেশ ভরাট হওয়াতে বর্ষায় বৃষ্টি ও উজানের নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সহজেই টইটুম্বুর হয় সুরমা।
সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ফের সুরমা নদী খননের জন্য সমীক্ষা চালানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ সমীক্ষা প্রতিবেদনও আলোর মুখ দেখেনি। অবশ্য ২০১৮ সালে সিলেট সদর উপজেলার কানিশাইলে ৬০০ মিটার সুরমা নদী খনন করা হয়। এ সময় সিলেট সদর উপজেলা এবং কানাইঘাট উপজেলার কয়েকটি অংশে নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নদীটির উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে ৩৫টি জায়গাসহ বিভিন্ন স্থানে পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে তলদেশ। এ অবস্থায় এ নদীর খনন ছাড়া সিলেট নগরীর সুরমা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
More News Of This Category