নিজস্ব প্রতিবেদক:- সারাদেশের মতো সিলেটেও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই বন্ধের দিনে রাজধানীর মতো সিলেটেও সড়ক অবরোধ করেছে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পঞ্চম দিনে আজ টানা আন্দোলনের রেশ পড়েছে সিলেটে।
বেলা দুইটার দিকে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা নগরীর চৌহাট্টাস্থ শহীদ মিনার অভিমুখে আসতে শুরু করে। সবার মুখেই প্রতিবাদী স্লোগান, গলায় ঝুলানো প্লে-কার্ড। যাতে লেখা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমার মাটি আমার মা, রাস্তা কারো বাপের না’, স্বার্থক জনম মাগো আমার জন্মেছি এই দেশে, বাসের চাপায় মানুষ মরে মন্ত্রি সাহেব হাসে, এমন সব স্লোগান। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে এভাবে স্লোগানে স্লোগানে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় চৌহাট্টা-জিন্দাবাজার সড়ক।
এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে জনস্রোত বাড়তে থাকে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টে। সেখানে তারা গাড়ি চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষায় দীর্ঘ সময় কাজ করে। আবার অনেক চালককে দেয় বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ। এভাবে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। অবশেষে সন্ধ্যার সামান্য আগে শুক্রবার ৩ টা থেকে আবারো রাস্তায় নামার ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি শেষ করে।
এর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে এবং ঢাকায় শিক্ষার্থী নিহত ও হামলার প্রতিবাদে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শাবিপ্রবি) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
বৃহস্পতিবার (২ আগস্ট) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় গেটে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর পাঠানটুলা এলাকা ঘুরে আবার বিশ্ববিদ্যালয় গেটে গিয়ে হয়। বিক্ষোভ মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এসময় তারা ঢাকায় শিক্ষার্থী নিহত ও হামলার প্রতিবাদ এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবি জানায়।
উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মীম নিহত হন। বাসচাপায় আহত হন আরও ১৩ জন।
এ ঘটনা কেন্দ্র করে পাঁচ দিন ধরে রাজধানীজুড়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তারা দোষী পরিবহনকর্মীদের বিচার ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি জানাচ্ছেন।
এদিকে বুধবার বিকাল ৩টায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদের বার্তা দেশব্যাপী পৌঁছে গেছে। তোমাদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। কাজেই তোমরা অবরোধ তুলে নাও, ক্লাসে ফিরে যাও।
এ আহ্বানের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পুলিশের আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী প্রমুখ বৈঠক করেন।
পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সারা দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
More News Of This Category