ওয়েছ খছরু:- গত সপ্তাহে সিলেটে করোনা নিয়ে উৎকণ্ঠা ছিল বেশি। হু হু করে বেড়েছিল রোগীর সংখ্যা। এ নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন সবাই। কিন্তু গত তিনদিন ধরে শনাক্তের হার কমেছে। তবে- এ নিয়ে চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন- সিলেটে স্বাস্থ্য বিধি না মানায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মাস্ক না পরা, দূরত্ব বজায় না রাখা এবং সামাজিক অনুষ্ঠানাদি পালনে সতর্ক হচ্ছেন না কেউ। এই অবস্থায় সিলেটের প্রশাসন থেকে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
মাঠে নামানো হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালতও। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই সিলেটে। গত এক মাসে করোনা পরিস্থিতি বেড়েই চলেছে। নমুনা সংগ্রহের হিসেবে দেখা গেছে সিলেটে গতকালও আক্রান্ত শনাক্তের হার ছিল প্রায় ১৬ শতাংশ। আক্রান্তের হার গত তিনদিনের মধ্যে গতকাল কিছুটা কমে এসেছে। ১৬৮০টি নমুনার মধ্যে সিলেটে শনাক্ত হয়েছেন ২৬৮ জন রোগী। একই সময়ে মারা গেছেন দুই জন। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায়ই তাদের মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে গত সপ্তাহে সিলেটে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল বেশি। অনেক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শনিবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত কিছুটা কমেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- সিলেটে করোনা পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্থিতিশীল। যদি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় তাহলে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এজন্য সবাইকে মাস্ক সহ করোনার সকল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি। সিলেটে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ১২০৯ জন। বাকিরা সুস্থ হয়েছেন। হাসপাতালে কিংবা বাড়িতে থেকে তারা সুস্থ হয়েছেন। সিলেটে করোনা রোগীর চাপ এখনো কম। প্রতিটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে আলাদা জোন করে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তবে- ক্রিটিক্যাল রোগীর সংখ্যা কমছে না। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সিলেটে ১৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী আইসিইউতে। মাঘের শেষ দিকে সিলেটে শীত জেঁকে বসায় বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এদিকে- করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে। মাঠে নামছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রয়োজনে জেল-জরিমানা করা হবে। এরই মধ্যে সিলেটে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। সভায় জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ ব্যবস্থায় পরিবহন শ্রমিক ও হোটেল- রেস্টুরেন্ট কর্মচারীদের করোনা টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান- সিলেটে পর্যাপ্ত টিকা মজুত আছে। টিকাদান প্রস্তুতিতেও কোনো কমতি নেই; কিন্তু মানুষের মধ্যে আগ্রহ কম, যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। কারণ এতে সংক্রমণ দ্রুতহারে বাড়তে থাকবে। তারা আরও জানান- করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজের ৬ মাস পূর্ণ না হলে এবং এসএমএস না এলে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে না। কারণ এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন- মহানগরীর প্রতিটি মসজিদে মাইকে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি নির্দেশনা প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, তার অনুরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক অন্যান্য জেলা থেকে পর্যটকরা এই সময়ে যাতে অধিকমাত্রায় সিলেটে না আসে সে ব্যাপারে অন্যান্য জেলায় নির্দেশনা দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন- প্রতিটি বিপণি বিতানে মাস্কছাড়া যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা বিপণি বিতান কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে। ইমামদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। জেলা প্রশাসক মসজিদের মাইকে করোনা সম্পর্কে সচেতনতামূলক বার্তা প্রচারের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি কাউন্সিলরদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে সচেনতামূলক সভা করতে সিসিক মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান।