নিউজ ডেস্ক: সিলেটের গোয়াইনঘাটে আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের রহস্যে ইতোমধ্যে উদঘাটিত হয়েছে। ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিফজুর রহমানই তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন বলে পুলিশ তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। তাকে ওই মামলায় গ্রেফতারও দেখানো হয়েছে।
রোববার (২০ জুন) বেলা ১১টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের ছাড়পত্র নেয়ার পর পুলিশ হেফাজতে হিফজুরকে নেয়া হয়েছে। এরপর দুপুরের দিকে তাকে আদালতে তুলা হবে। ওই সময় আদালতে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাকে গোয়াইনঘাট থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদ। তিনি জানান, পুলিশ হেফাজতে হিফজুরকে নেয়া হয়েছে। হাসপাতালের সব কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে পুলিশ। তাকে আদালতে দুপুরের দিকে তুলা হবে। এসময় আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করবেন।
তিনি জানান, হত্যাকান্ডের সাথে হিফজুর সরাসরি জড়িত। বাইরে থেকে কেউ হত্যার জন্য এলে সঙ্গে করে অস্ত্র নিয়ে আসতো। তাদের ঘরের বটি, দা দিয়েই খুন করত না। বিরোধের কারণে খুনের ঘটনা ঘটলে প্রথমেই হিফজুরকে হত্যা করা হতো কিংবা স্ত্রী সন্তানদের প্রথমে হামলা করলেও হিফুজর তা প্রতিরোধের চেষ্টা করতেন। এতে স্বভাবতই তিনি সবচেয়ে বেশি আঘাতপ্রাপ্ত হতেন।
হিফুজরের আঘাত ‘একেবারেই সামান্য’ তিনি বলেন, শরীরের কিছু জায়গায় চামড়া উঠে গেছে কেবল। এতে আমাদের ধারণা স্ত্রী সন্তানদের হত্যা করে ঘটনা অন্য খাতে প্রবাহিত করতে চান। হিফজুর রহমান প্রথম থেকেই সন্দেহজনক আচরণ করছেন। প্রথমে আমরা তা বুঝতে পারিনি। তিনি ঘরের ভেতরে অজ্ঞানের ভান করে পড়েছিলেন। তবে হাসপাতালে নেয়ার পর বোঝা যায়, তার আঘাত গুরুতর নয়।
জানা যায়, গত বুধবার সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণ পাড়া গ্রামের নিজ ঘর থেকে হিফজুরের স্ত্রী আলেমা বেগম (৩০), তার দুই সন্তান মিজান (১০) ও আনিছার (৩) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘর থেকেই হিফুজরকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে হিফজুর পুলিশ পাহারায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার আচরণ প্রথম থেকেই সন্দেহজনক বলে জানিয়েছিল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় তাদের হত্যা করা হয়। ওই রাতে মামার বাসায় থাকায় বেঁচে যায় ওই দম্পতির পাঁচ বছরের ছেলে আফসান।
জিজ্ঞাসাবাদ ও হিফজুরের মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে ওই দিন এ বাড়িতে কোনো বহিরাগত লোক প্রবেশের আলামত পাওয়া যায়নি। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া এবং স্ত্রী ও দুই সন্তানের অসুস্থতা নিয়ে টানাপোড়েনের জেরেই হিফজুর এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। ঘটনার আগের দিন সাহেববাজার এলাকার কালাগুলে আতা নামের এক মোল্লার কাছে যান হিফজুর। হিফজুর আতা মোল্লার মুরিদ ছিলেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি ওই মোল্লার কাছে যাওয়া আসা করতেন। ঘটনার দিন সেখান থেকে হিফজুর বাড়ি ফিরেন। স্ত্রীকেও ওই মোল্লার কাছে নিয়ে যেতেন তিনি। হিফজুর রহমান পান ব্যবসা করতেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় পানের টাকা সংগ্রহ করার জন্য তিনি বাজারে যেতেন। কিন্তু ওইদিন তিনি আর বাজারে যাননি। এমনকি ঘটনার ভোর রাতে তিনি তিন জন মানুষের সাথে যোগাযোগ করেন ফোনে। এর মধ্যে একজন অটোরিকশা চালক। তার কাছে ফোন করে হিফজুর অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ ঘটনায় বুধবার রাতে নিহত নারীর বাবা আয়ুব আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২২ (১৬/০৬/২০২১)। এ মামলায় শনিবার হিফজুর রহমানকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
More News Of This Category