কালের ঢোল:- বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সেই আদিকাল থেকেই কৃষিকে সযত্নে লালন করে আসছে। জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বছরে একশতাংশ হারে কৃষি জমি হ্রাস, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, কৃষকের সীমিত জ্ঞান প্রভৃতি প্রতিবন্ধক থাকা সত্ত্বেও বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকারের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার এবং কৃষি বিজ্ঞানীদের ধারাবাহিক অভূতপূর্ব সাফল্যে বাংলাদেশ সম্প্রতি খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করার পাশাপাশি রপ্তানি করতেও সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের এই অর্জনকে ধূলোয় মিশিয়ে জীবনের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে খাদ্যে বিষক্রিয়া।
আজকাল খাবারে ভেজাল কথাটা যেন প্রভাতে সূর্য উদয়ের মতোই সত্য। ব্যবসায় অধিক লাভের আশায় মানুষ তার মনুষ্যত্ব খুইয়ে ফেলছেন, দিনকে দিন। খাদ্যশস্য, ফলমূল, সবজি ইত্যাদি উৎপাদনে রাসায়নিকের ব্যবহার, মাঠ থেকে উত্তোলন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, আবার খাবার তৈরির সময়ও তাতে থাকছে ভেজালের স্পর্শ। এভাবে পুরো খাবারে ভেজালের ভাগটাই হয়ে যাচ্ছে বেশি। লোকমুখে গল্প শুনেছি, এক লোক মনের দুঃখে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পুরো এক বোতল বিষ খেয়েও তিনি মারা গেলেন না। পরে জানা গেল ওই বিষের মধ্যেও ভেজাল ছিল। বস্তুত ভেজালের জালে বন্দী বাংলাদেশ, সময়মতো মুক্তি না পেলে হয়ে যাবে সব শেষ। ভেজালের এই মহোৎসবের পেছনে রয়েছে এক শ্রেণীর অসাধু মুনাফা লোভী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যারা সাধারণ মানুষকে বলি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বলা যায়, এ একরকম নীরব মানবহত্যা। হাজারো বাবসায়ীদের মধ্যে আব্দুশ সহিদ নামের এক ব্যাবসায়ীর দেখা মিলেছে জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া বাজারে। তিনি কলকলিয়া ইউনিয়নের খাশিলা গ্রামের বাসিন্দা। বিগত কয়েক বছর ধরে কলকলিয়া বাজারে কলার ব্যবসা করে আসছেন। ১২ই সেপ্টেম্বর (শনিবার) সন্ধায় প্রকাশ্যে কাছ কলায় ফরমালিন ব্যবহার করতে দেখা গেছে তাকে।
মানবদেহে ফরমালিন, কার্বাইডসহ বিভিন্ন ভেজালযুক্ত খাবারের ক্ষতিকর প্রভাব পৃথিবীর ১৩টি দেশে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য নিয়ম বহির্ভূতভাবে খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন জাতীয় কেমিক্যাল পদার্থ মিশানো হয়ে থাকে তার মধ্যে বাংলাদেশসহ চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, পাকিস্তানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পাঠক, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৪৫ লাখ লোক খাদ্যে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগছে। মুশকিল হলো ভেজাল খাবারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় খুব ধীরে ধীরে। ভেজাল খাবারে নিজের অজান্তেই দেহে বাসা বাঁধছে যেসব মরণব্যাধি তা নিম্নে সংক্ষেপে দেয়া হলো।
ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, অরুচি, ক্ষুধামন্দা, বদহজম, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, আলসার, লিভার সিরোসিস, অন্ধত্ব, ত্বক-চোখের জ্বালাপোড়া হয়।
রাসায়নিক পদার্থ লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন সব কিছুকে ধ্বংস করে দেয়। ক্ষীণ স্মৃতিশক্তি, রক্তশূন্যতা, পাকস্থলী, ফুসফুস, শ্বাসনালিতে ক্যান্সার ও ব্লাড ক্যান্সার।
রক্তের এসিডিটি বাড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা। শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধিসহ মস্তিষ্কের বিকাশও থেমে যায়। এমনকি মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার আশষ্কা থাকে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী ফরমালি ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে জনগনকে বিষ খাওয়া থেকে বিরত রাখা।
More News Of This Category