দৃক নিউজ২৪ ডেস্ক:- বিপিএলের খেলা নিয়ে রমরমা জুয়ার আসর বসেছিল বাড্ডায়। পাশাপাশি দুটি টিনশেড ঘরে ক্যারাম খেলা চলছিল এ আসরে। তবে তাতে বাধা দিয়েছিলেন মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নাসিম আহমেদ এমাজউদ্দিন (২৪)। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কয়কজনের সঙ্গে হাতাহাতিও হয়েছিল তার।
তারই জেরে রোববার রাতে আপস করতে আসা নাসিমের বাবাকেও মারধর করা হয়। বিষয়টি মীমাংসা করতে মহল্লায় আজ সোমবার বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ছুরিকাঘাতে খুন হলেন নাসিম।
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন গুলশান বিভাগ পুলিশের উপ-কমিশনার মোস্তাক আহমেদ, বাড্ডা জোনের সহকারি কমিশনার আশরাফ আলী ও বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী।
পরবর্তীতে র্যাব, পিবিআই, ডিবি পুলিশও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে।
পরিবার জানিয়েছে, নিহত নাসিম বেসরকারি মানারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাবার নাম আলী আহমেদ সাইফ উদ্দীন। মাত্র ৯ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল নাসিমের।
সোমবার সকালে পূর্ব বাড্ডায় নাসিমের বাসায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের ভিড়। নাসিমের স্ত্রী শামীমা জাহান অন্তী আহাজারি করছেন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা পারভীন আক্তার।
নিহতের ছোট ভাই ইম্পেরিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র নাবিল আহমেদ জানান, বিপিএল খেলা নিয়ে বোর্ড (ক্যারাম বোর্ড) ঘরে রমরমা জুয়ার আসর চলছিল। সেখানে সন্ধ্যার পর ক্যারাম খেলতেন ভাই নাসিম। গত রাতে নাসিম ক্যারাম খেলতে গিয়ে দেখেন বিপিএলের ম্যাচ নিয়ে মোটা অঙ্কের জুয়া চলছিল। এতে বাধা দেন নাসিম। বাধার মুখে রমজান আলী, আসিফ, রশিদ, শহীদুল ও রফিক নামে স্থানীয়দের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় নাসিমের। ঘটনা হাতাহাতি পর্যন্তও গড়ায়।
নাবিল জানান, বিষয়টি আপস করতে গেলে রমজান ও রশিদ মারধর করেন নাসিমের বাবাকে। মহল্লার বড়ভাইরা আজ বসে বিষয়টি মীমাংসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আজ সকালে ভাইকে বাসার নিচে ছুরিকাঘাত করে ওদেরই তিন জন।
নাসিমের মা পারভীন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, জুয়া খেলায় বাধা দেয়ায় ছেলে খুন হবে ভাবতে পারিনি। ছেলে আমার জুয়া খেলে না। ক্যারাম খেলতে গিয়েই ওদের রোষানলে পড়েছে। হাতাহাতিও হয়েছে। সেটা যে খুন পর্যন্ত গড়াবে ভাবিনি।
বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে আমরা জেনেছি। ক্রিকেট খেলার বাজিকে নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে আজ খুন হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নাসিম। এর পেছনে আরও কোনো কারণ আছে কি-না তা আমরা খতিয়ে দেখছি। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে মূল কারণ বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। জড়িতদের ধরতে চেষ্টা চলছে।’
ডিএমপির গুলশান বিভাগের বাড্ডা জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আশরাফ আলী জাগো নিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি ক্রিকেট খেলায় বাজি ধরাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জের ধরে ২-৩ জন দুর্বৃত্ত তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িত ৩-৪ জনের নাম আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি। তাদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
More News Of This Category