মু. জামাল হুসাইন
কেবলমাত্র আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথেই ১০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন তারকার বসবাস। আর আমাদের পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে সম্ভবত অন্তত দুই ট্রিলিয়ান ছায়াপথ রয়েছে। যার প্রতিটিতে রয়েছে শত শত বিলিয়ন তারকার পাশে ঘূর্ণায়মান কয়েক ট্রিলিয়ন গ্রহ।
এমনকি যদি এই গ্রহগুলোর মধ্যে গুটি কয়েকটিতেও প্রাণের উপস্থিতি থেকে থাকে, তাহলে পৃথিবী ছাড়াও মহাবিশ্বের কোথাও না কোথাও বুদ্ধিমান জীবের অস্তিত্ব রয়েছে।
বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি আমাদের ছায়াপথের কেবল মাত্র ০.১ শতাংশ গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব থেকে থাকে তবে প্রায় ১০ লাখ গ্রহে বুদ্ধিমান জীবের অস্তিত্ব থাকার কথা । এই সংখ্যাগুলো নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী এনরিকো ফারমির অ্যালিয়েন জীবনধারা নিয়ে জিজ্ঞাসামূলক গবেষণা ‘হোয়ার আর দে?’ তে উল্লেখ করা হয়েছে। তার এই প্রশ্নটি ফারমি প্যারাডক্স হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এটির সম্ভাব্য উত্তরগুলো মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে।
এর মধ্যে অন্যতম যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো ‘গ্রেট ফিল্টার’ হাইপোথিসিস, যা বুদ্ধিমান জীবকে মূল গ্রহের সীমা অতিক্রম করার সুযোগ করে দিয়েছে। এমনই একটি ‘গ্রেট ফিল্টার হাইপোথিসিস’ হলো জলবায়ু পরিবর্তন, যদি এটি চলতেই থাকে তবে এর ফলে আমাদের এই পৃথিবীর অনেক প্রাণীও ধ্বংস হয়ে যাবে এবং এটি আমরা জানি। এই জলবায়ু পরিবর্তনই অন্যান্য বুদ্ধিবৃত্তিক জীবগুলোকে তাদের গ্রহের সীমা অতিক্রম করতে বাধ্য করছে।
গত ১২ হাজার বছর ধরে একমাত্র স্থিতিশীল জলবায়ু ছিল বলে মানব সভ্যতা এতটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানব সভ্যতা কৃষি থেকে উপকৃত হয়েছে এবং অবশেষে শিল্পায়নের দিকে ধাবিত হয়েছে। যদিও এই শিল্পায়ন বিপরীতভাবে আমাদের ধ্বংসের কারণও হতে পারে!
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে একটি গ্রহের বিভিন্ন প্রজাতির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। এর মধ্যে দুটি অপরিহার্য এবং একটি দ্রুত প্রজনন চক্র সম্বলিত প্রজাতিও রয়েছে।
অক্সফোর্ডের স্নায়ুবিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স স্যান্ডবার্গ, বেলগ্রেডের অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার সদস্য মিলান সারকোভিক এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) বিশেষজ্ঞ স্টুয়ার্ট আর্মস্ট্রং এর মতে, অ্যালিয়েনরা এখনো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি, তারা শীতযাপনতায় আছে এবং অপেক্ষা করছে যে কবে এই মহাবিশ্ব আবার ঠান্ডা হবে।
ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব তিবিলিসির অধ্যাপক জাজা ওসমানোভ বিশ্বাস করেন যে, ভিনগ্রহের প্রাণী সম্পর্কে অনুসন্ধান এখনো সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আমরা এখনো পর্যন্ত শুধু বড় বড় তারকাগুলোতেই অনুসন্ধান করেছি। তার মতে, সফলতা পেতে আমাদেরকে এর নাড়ি-নক্ষত্রেও অনুসন্ধান করতে হবে।
বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, সত্যিই যদি আমাদের এই মহাবিশ্বে মানুষ ব্যতীত কোনো বুদ্ধিমান জীবের অস্তিত্ব থেকে থাকে তবে অবশ্যই আমরা তাদের কাছে কোনো না কোনো দিন পৌঁছাতে পারব।