দৃক নিউজ২৪.কম ডেস্ক # কুঁড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। সরকারের তরফে পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অভিযোগ তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না। আবার কোনো কোনো এলাকায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌচেছে বলে জান গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও স্থানীয়দের অভিযোগ জনপ্রতিনিধিদের স্বজন, সরকারি দলের লোকজনকে ত্রাণ সুবিধা দেয়া হলেও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নন এমন ব্যক্তি ও সচ্ছল ব্যক্তিরাও দলীয় পরিচয়ে ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন। এলাকায় থাকেন না এমন ব্যক্তির নামেও ত্রাণ বরাদ্দের প্রমাণ পাওয়া গেছে।জাতীয় পত্রিকা মানবজমিন সুত্রে জান যায়, সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামের রাজারহাট, চিলমারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন দুর্গত এলাকায় মাঠ পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণে এমন নানা দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন বানভাসী মানুষ।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান মানবজমিনকে বলেন, আমিও ত্রাণ বিতরণে কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। একটার সত্যতা পেলেও বাকিগুলোর সঠিক নয়। কোন দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আলেয়া একজন প্রবাসী নারী, রয়েছেন বিদেশে। তার নামেই বিতরণ হয়েছে ১০ কেজি চাল (বিতরণ তালিকায় ক্রমিক নং ১৫০৪)। এই ঘটনা রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের। ওই ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছিনাইহাট বড়গ্রাম পাড়ার বাসিন্দা আলেয়া। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ছোবহান আলী ওরফে ছোবহান ব্যাপারীর বিরুদ্ধেউঠে এই অভিযোগ। তার বিরুদ্ধে ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতি, আঞ্চলিকতা এবং ভোট রাজনীতির অভিযোগও রয়েছে স্থানীয়দের। ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও তার আপন চার ভাই আসাদুল, সোহরাব, আহাদ এবং আশরাফ ত্রাণ পেয়েছেন। এর মধ্যে দু’বার পেয়েছেন আহাদ। শুধু তাই নয়। গত ইউপি নির্বাচনে যারা তার হয়ে কাজ করেছে তারাও এরইমধ্যে কয়েকবার ত্রাণ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে দু’জন ওই ওয়ার্ডের বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা ওমেদ আলী ও খয়রাত। অবস্থা সম্পন্ন দু’পরিবারে গিয়ে দেখা গেছে তাদের ঘরে পানি ঢুকলেও ক্ষয়ক্ষতি কম। অথচ তারা এরই মধ্যে সরকারি ভাবে দেয়া ত্রাণ দু’বার পেয়েছেন। কিন্তু ওই ওয়ার্ডের বানিয়াপাড়া, কেন্দুয়াপাড়া, নাপিতপাড়া, মেকলীসহ কয়েকটি গ্রামের বহু হতদরিদ্র ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ত্রাণ পায়নি। এর মধ্যে ভাটিয়াপাড়ার শাহারা ও বানিয়াপাড়ার মল্লিকা, সিরাজুল হক, আবদুল বাতেন, আজিরন এবং মততাসহ অনেকে। তারা সহ বেশ কয়েক নারী-পুরুষ জানান, ‘ত্রাণ নিতে গেলে গত ১৯শে আগস্ট স্থানীয় ছোবহান মেম্বার বলেন, তোমরা আমাকে ভোট দাও নাই। আমি আমার লোককে ত্রাণ দেবো। আমি তোমাদের ত্রাণ দেবো না। এরপর থেকে আমরা যারা তাকে ভোট দিইনি তাদের অনেকেই ত্রাণ পাইনি।’এর সত্যতা জানতে ওই ইউপি সদস্যের লোক বলে পরিচিত ওমেদ আলীর বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি মেম্বার ও চেয়ারম্যানের লোক। আমি দু’বার সরকারি ও দু’-একবার বেসরকারি ত্রাণ পেয়েছি। তবে এর আগে যখন অন্য চেয়ারম্যান ক্ষমতায় ছিল, অন্য মেম্বার দায়িত্বে ছিল তখন আমরা ৫ থেকে ৬ বছর বন্যায় কোনো ত্রাণ পাইনি। মেম্বার ও চেয়ারম্যানের বঅপর ঘনিষ্ঠ খয়রাত বলেন, আমার ঘর ভাঙেনি, খড়ি ভেঙেছে। ২ বার রিলিফ পেয়েছি। আমি মেম্বার-চেয়ারম্যানের লোক হলেও তারা এই এলাকার সঙ্গে বিমাতা সুলভ আচরণ করছে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়নটির ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে ৯৩৭টি পরিবার (২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)।
এরমধ্যে প্রথমবার ১৫ই আগস্ট ৩৪১ জনকে (বিতরণের মাস্টাররোল ক্রমিক নং-১২৯০ থেকে ১৬৩১) এবং দ্বিতীয়বার ১ হাজার ৩৯ জনকে (ক্রমিক নং ১৪৮০ থেকে ২৫১৯) ত্রাণ বিতরণ করা হয়। দু’বারে মোট ১ হাজার ৩৮০ জনকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিতরণ করা ত্রাণও ওই ওয়ার্ডের অনেকে পেয়েছেন। সে হিসাবে ওই ওয়ার্ডের প্রতিটি পরিবার অন্তত একবার বা তার বেশি ত্রাণ পাওয়ার কথা থাকলেও পায়নি কয়েকটি পাড়ার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারই। এর বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য ছোবহান আলী বলেন, আমার ভাইও গরিব। তাই দু’বার ত্রাণ দেয়া হয়েছে। যারা ভোট দেয়নি তাদের ত্রাণ দেবো না একথা আমি বলিনি। তবে হাতে সময় কম থাকায় হয়তো তালিকায় এক নাম কয়েকবার এসেছে। আগামীবার ত্রাণের বরাদ্দ এলে আমি প্রতিদ্বন্দ্বী মেম্বার প্রার্থীদের দেবো। স্থানীয়দের একই অভিযোগ অপর ইউপি সদস্য খালিদ হাসান খলিলসহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে খলিল বলেন, তালিকায় নাম থাকলেও নিতে না আসায় সে ত্রাণ অন্যজনকে দিয়ে ফেলেছি। তাছাড়া সবাই ত্রাণ পেয়েছে। এমনকি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান হক বুলুর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ। ছিনাই ইউনিয়নে মোট ৬ হাজার ৬৮৩ পরিবার। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার দুর্গতের মাঝে ত্রাণবিতরণ করেন। আর দু’দফায় যথাক্রমে ২১ ও ৪০ টন চালের বরাদ্দ দেয়া হয়। তা ১০ কেজি করে ৬ হাজার জনের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
More News Of This Category