,
শিরোনাম
জগন্নাথপুরে জাতীয় ইমাম সম্মেলন সম্পন্ন হযরত মাওলানা মরহুম এমদাদুর রহমান (রঃ) এর ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে মীলাদ ও দোআ মাহফিল এবং অসহায় গরীবদের মাঝে কাপড়  বিতরণ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ২০২৩ শিক্ষা বর্ষের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ‌্যে পুরষ্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জগন্নাথপুরে মামলা দায়ের বাতিল হতে পারে ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি ইন্টারনেট শাটডাউন: তদন্তে বেরিয়ে এলো যাদের নাম শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন ড. ইউনূস আমার মায়ের পদত্যাগের বিষয়ে দেয়া বিবৃতি পুরোপুরি মিথ্যা: জয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ উপদেষ্টা পরিষদের ৮ সিদ্ধান্ত

১৫ই আগষ্ট ও একটি পর্যালোচনা

মু. জামাল হুসাইন#

“যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মজিবুর রহমান”

১৫ই আগষ্ট। জাতীর জন্য এক কলঙ্কময় দিন। জাতীয় শোক দিবস। ৪১ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই দিনে একদল বিপদগামী পাক হায়েনাদের প্রেতাত্মা তথা সেনাবাহিনীর একটি চক্রান্তকারী চক্র সপরিবারে হত্যা করে বাঙালী জাতীর জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, বাঙালী জাতীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
৪৭, ৫২, ৬৯, ৭০ সহ বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর দ্বার হতে বার বার ফিরে এসেছিলেন, ৭১-এ পাকিস্তানী হায়েনারা যা করতে পারে নাই, সেই কাজটিই অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ও পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সম্পাদন করে পাপিষ্ঠ ঘাতকরা। ওরা মানুষ নামের হায়েনার দল, ওরা শয়তানের প্রেতাত্মা। ওরা জঘন্য। ওরা বিপদগামী হিংস্র জানোয়ারের দল।
একদিন যে অঙ্গুলী উচিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন, বলেছিলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ” সেই স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁর অঙ্গুলি চিরদিনের জন্য নিস্তেজ করে দেয় ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক সেই বাড়িতে। আর কোনদিন ঐ অঙ্গুলি আমাদেরকে প্রেরণা দিতে আসবেনা, দিবেনা মুক্তির বারতা। তবে একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে তিনি মৃত্যুহীন। প্রাণী হিসেবে মানুষ মরণশীল বলে সবারই একটি মৃত্যু দিন থাকে। তবে কোনো কোনো মানুষের শুধু দেহাবসানই ঘটে, মৃত্যু হয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যিনি আমাদের জাতীর পিতা, তার কি মৃত্যুহতে পারে ? না তিনি মৃত্যুহীন। চির অমর। সেদিন যা ঘটেছিল: (বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (রেসিডেন্ট পি এ) জনাব আ ফ ম মোহিতুল ইসলাম এর এজাহারে বর্ননানুসারে) ১৯৭৫ সালে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে কর্মরত ছিলেন। ১৪ আগষ্ট (১৯৭৫) রাত আটটা থেকে ১৫ আগষ্ট সকাল আটটা পর্যন্ত তিনি ডিউটিতে ছিলেন ওই বাড়িতে। ১৪ আগষ্ট রাত বারোটার পর ১৫ আগষ্ট রাত একটায় তিনি তাঁর নির্ধারিত বিছানায় শুতে যান। মামলার এজাহারে জনাব মোহিতুল উল্লেখ করে বলেন, ‘তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম তা খেয়াল নেই। হঠাৎ টেলিফোন মিস্ত্রি আমাকে উঠিয়ে (জাগিয়ে তুলে) বলেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব আপনাকে ডাকছেন। তখন সময় ভোর সাড়ে চারটা কী পাঁচটা। চারদিকে আকাশ ফর্সা হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু ফোনে আমাকে বললেন, সেরনিয়াতের বাসায় দুষ্কৃতকারী আক্রমণ করেছে। আমি জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করলাম। অনেক চেষ্টার পরও পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাইন পাচ্ছিলাম না। তারপর গণভবন এক্সচেঞ্জে লাইনলাগানোর চেষ্টা করলাম। এরপর বঙ্গবন্ধু ওপর থেকে নিচে নেমে এসে আমার কাছে জানতে চান পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে কেন কেউ ফোন ধরছে না। এসময় আমি ফোন ধরে হ্যালো হ্যালো বলে চিৎকার করছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু আমার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বললেন আমি প্রেসিডেন্ট বলছি। এসময় দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে একঝাঁক গুলি এসে ওই কক্ষের দেয়ালে লাগল। তখন অন্য ফোনে চিফ সিকিউরিটি মহিউদ্দিন কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। গুলির তান্ডবে কাঁচের আঘাতে আমার ডান হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এসময় জানালা দিয়ে অনর্গল গুলি আসা শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শুয়ে পড়েন। আমিও শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর সাময়িকভাবে গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে বঙ্গবন্ধু উঠে দাঁড়ালেন। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। ওপর থেকে কাজের ছেলে সেলিম ওরফে আবদুল বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবী ও চশমা নিয়ে এলো। পাঞ্জাবী ও চশমা পরে বঙ্গবন্ধু বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বললেন আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে তোমরা কি কর? এসময় শেখ কামাল বলল আর্মি ও পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসুন। কালো পোশাক পরা একদল লোক এসে শেখ কামালের সামনে দাঁড়ালো। আমি (মোহিতুল) ও ডিএসপি নূরুল ইসলাম খান শেখ কামালের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নরুল ইসলাম পেছন দিক থেকে টান দিয়ে আমাকে তার অফিস কক্ষে নিয়ে গেল। আমি ওখান থেকে উঁকি দিয়ে বাইরে দেখতে চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি গুলির শব্দ শুনলাম। এসময় শেখ কামাল গুলি খেয়ে আমার পায়ের কাছে এসে পড়লেন। কামাল ভাই চিৎকার করে বললেন, আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল, ভাই ওদেরকে বলেন।
’মোহিতুল ইসলামের এজাহারের বর্ণনায় বলেন, ‘আক্রমণকারীদের মধ্যে কালো পোশাকধারী ও খাকি পোশাকধারী ছিল। এসময় আবার আমরা গুলির শব্দ শোনার পর দেখি ডিএসপি নূরুল ইসলাম খানের পায়ে গুলি লেগেছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম আক্রমণকারীরা আর্মির লোক। হত্যা কান্ডের জন্যই তারা এসেছে। নূরুল ইসলাম যখন আমাদেরকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন তখন মেজর বজলুল হুদা এসে আমার চুল টেনে ধরলো। বজলুল হুদা আমাদেরকে নিচে নিয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড় করালো। কিছুক্ষণ পর নিচে থেকে আমরা বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শুনলাম। বিকট শব্দে গুলি চলার শব্দ শুনতে পেলাম আমরা। শুনতে পেলাম মেয়েদের আত্মচিৎকার, আহাজারি। এরইমধ্যে শেখ রাসেল ও কাজের মেয়ে রুমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। রাসেল আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমাকে মারবেনাতো। আমি বললাম না তোমাকে কিছু বলবে না। আমার ধারণা ছিল অতটুকু বাচ্চাকে তারা কিছু বলবে না। কিছুক্ষণ পর রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রুমের মধ্যে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর মেজর বজলুল হুদা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মেজর ফারুককে বলে, অল আর ফিনিশড।’

অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ফারুক রহমানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বলেন, খোন্দকার মোশতাকের নির্দেশে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট তিনি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই বাসভবনে অভিযানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল রশিদ দায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গভবনে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডালিম ছিলেন বেতার কেন্দ্রে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগু লোতে সামরিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বন্টন করেছেন তিনি (ফারুক) নিজেই।

যারা সেদিন ঘাতকদের হাতে জীবন দিয়েছিলেন:
ঘাতকদের মূল টার্গেট ছিল যে তারা বঙ্গবন্ধুসহ তার পুরো পরিবার ও তার নিকট আত্মীয় কাউকেই পৃথিবীতে জীবিত রাখবে না। সেই অনুযায়ী তারা সেদিন ঐ ঘাতকরা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ীতে হত্যার এক জঘন্য উল্লাসে মেতে উঠেছিল। হত্যা করেছিল বিভিন্ন ঘরে ও একাধিক বাড়ী হতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার এবং নিকট আত্মীয় সহ মোট ২৬ জনকে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানীতে অবস্থান করার কারনে তারা প্রাণে বেঁচে যান। তাদের বাংলাদেশে ফিরে আসার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। বাড়ির ছোট্ট ছেলে হিসেবে সবার আদরের ছিল। রাজনৈতিক পরিবেশ ও সঙ্কটের মধ্যেও সে চির সঙ্গী সাইকেল নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতো। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয় মাস পিতার অদর্শন তাকে এমনই ভাবপ্রবণ করে রাখে যে, পরে সব সময় পিতার কাছাকাছি থাকতে জেদ করতো।
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করে তাদের লাশ দেখিয়ে তারপর রাসেলকে হত্যা করা হয়। তাকে কাজের লোকজন পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে যায়। কিন্তু ঘাতকরা তাকে দেখে ফেলে। বুলেটবিদ্ধ করার পূর্বে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অনুমতি নেওয়া হয়। রাসেল প্রথমে মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের লাশ দেখার পর অশ্রু সিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিল ‘আমাকে হাসু আপার ( শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন।’ ঘাতকরা তাও শুনেনি। ব্রাশ ফায়ার করে তার মায়ের লাশের উপড় তাকেও শুইয়ে দিয়েছিল। এ যেন আর এক কারবালা। আর সীমারের ভূমিকায় ছিল সম্মিলিত ঘাতকদ্বয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের কালরাতে ঘাতকের হাতে নিহত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্ত:সত্তা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান।
ঘাতকরা সেদিন যাদের নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল খুনিদের বাঁচানোর জন্য ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্ব-ঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ (যিনি বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভার বানিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন) ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। সেদিন ছিল শুক্রবার।

‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা অধ্যাদেশটিতে খন্দকার মোশতাকের স্বাক্ষর আছে। মোশতাকের স্বাক্ষরের পর আধ্যাদেশে তত্কালীন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমানের স্বাক্ষর আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর মোশতাক নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দেন।
অধ্যাদেশটিতে দুটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবত্ আইনেরপরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।
দ্বিতীয় অংশে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।

এরপর ক্ষমতায় আসে আর এক সামরিক শাসক মেজর জিয়া। তিনি ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনে দেশে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেন।ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে যা বলা হয়েছিল,

“১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হইতে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল তারিখের (উভয় দিনসহ) মধ্যে প্রণীত সকল ফরমান, ফরমান আদেশ, সামরিক আইন প্রবিধান, সামরিক আইন আদেশ, ও অন্যান্য আইন, এবং উক্ত মেয়াদের মধ্যে অনুরূপ কোনো ফরমান দ্বারা এই সংবিধানের যে সকল সংশোধন, সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন ও বিলোপ সাধন করা হইয়াছে তাহা, এবং অনুরূপ কোনো ফরমান, সামরিক আইন প্রবিধান, সামরিক আইন আদেশ বা অন্য কোনো আইন হইতে আহরিত বা আহরিত বলিয়া বিবেচিত ক্ষমতাবলে, অথবা অনুরূপ কোনো ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে গিয়া বা অনুরূপ বিবেচনায় কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত কোনো আদেশ কিংবা প্রদত্ত কোনো দণ্ডাদেশ কার্যকর বা পালন করিবার জন্য উক্ত মেয়াদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত আদেশ, কৃত কাজকর্ম, গৃহীত ব্যবস্থা বাকার্যধারা সমূহ, অথবা প্রণীত, কৃত, বা গৃহীত বলিয়া বিবেচিত আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারা সমূহ এতদ্বারা অনুমোদিত ও সমর্থিত হইল এবং ঐ সকল আদেশ, কাজকর্ম, ব্যবস্থা বা কার্যধারাসমূহ বৈধভাবে প্রণীত, কৃত বা গৃহীত হইয়াছে বলিয়া ঘোষিত হইল, এবং তত্সম্পর্কে কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের নিকট কোনো কারণেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।”
এভাবেই মোস্তাক-জিয়া-এরশাদ-খালেদা গং বঙ্গবন্ধুর খুনীদেরকে রক্ষা করার ষোলকলা পূর্ন করেন। শুধু তাদের রক্ষা করেই ক্ষান্ত হয় নাই। তারা ঐ খুনী চক্রদের অনেক ভালভাবে পুরস্কৃত করেছিল। দিয়েছিল বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে গুরুত্ব পদ ও কুটনীতিক পদ।
১৯৭৬ সালের ৮ জুন ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত হত্যাকারী গোষ্ঠীর ১২ জনকে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল।
যেমন: ১. লে. কর্নেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব, ২. লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব, ৩. মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজেরিয়ায় প্রথম সচিব, ৪. মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব, ৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব, ৬. মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব। ৭. মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব, ৮. মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব, ৯. কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব, ১০. লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব,১১. লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব,১২. লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর পর দীর্ঘ ২১ বছর সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করার আইনি বাধা অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ (রহিতকরণ) বিল, ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদে উত্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর আইনটি সংসদে পাস হয়। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর এটি পরিপূর্ণভাবে আইনে পরিণত হয়। ফলে মোশতাকের জারি করা এবং জিয়াউর রহমানের সময় বৈধতা পাওয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হয়। এরপরই শুরু বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার কাজ।

এক নজরে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলাঃ

ঘটনার দিন : শুক্রবার, তারিখ : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।
সময় : ভোর ৪:৩০ থেকে ৫:০০টা।

ঘটনাস্থল :ধানমন্ডি ৩২ নং রোডের বঙ্গবন্ধুর বাসভবন, ধানমন্ডির ১৩ নং রোডের শেখ ফজলুল হক মনি’র বাসভবন ও হেয়ার রোডের আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসভবন।

মামলা দায়ের : ২ অক্টোবর ১৯৯৬ইং।
থানা: ধানমন্ডি ডিএমপি।
মামলার বাদী : বঙ্গবন্ধুর রেসিডেন্ট পিএ- আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম।
তদন্তকারী সংস্থা : সিআইডি।
মোট আসামি : ১৯ জন, পলাতক : ১৪ জন।
তদন্তের সময়কাল : ১০৮ দিন।
জিজ্ঞাসাবাদ : ৪৫০ জন।
আদালতে সাক্ষী প্রদান : ৬১ জন।
সাক্ষীদের মধ্যে : সমারিক বাহিনীর সদস্য ৩৯ জন,
বেসামরিক ব্যক্তি ২২ জন।
মোট শুনানি : ১৪৯ দিন।
সাক্ষ গ্রহণ ও জেরা : ১২১ দিন।
আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক : ২৮ দিন।
অভিযোগ গঠন : ৬ এপ্রিল।
শুনানি সমাপ্তি : ১৩ অক্টোবর ৯৮।
রায় ঘোষণা : ৮ নভেম্বর ৯৮।

হাইকোর্ট অংশ
১১ নভেম্বর ৯৮ : মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের জন্য হাইকোর্টে নথি প্রেরণ।
১৫ নভেম্বর ৯৮ : মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আটক আসামি ফারুক রহমান, শাহরিয়ার, মুহিউদ্দিন ও বজলুল হুদার পক্ষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দেয়া রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আপিল আবেদন জানানো হয়।
২৯ মে, ১৯৯৯ : বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার যাবতীয় নথিপত্র প্রিন্ট করে ১ হাজার ৯৬ পৃষ্ঠার পেপার বুক প্রস্তত করা হয়।
১৬ জানুয়ারি ২০০০ : বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও বিচারপতি শিকদার মকবুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান। আদালত ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য নির্ধারিত বেঞ্চে আবেদন জানানোর পরামর্শ দেন।
৬ ফেব্রম্নয়ারি ২০০০ : বিচারপতি এমএম রুহুল আমীন ও বিচারপতি আব্দুল মতিন সমন্বয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার শুনানি গ্রহণের জন্য আবেদন জানানো হয়। আদালত ক্রমানুসারে শুনানির জন্য অপেক্ষা করতে বলে। একই দিনে বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিন ও বিচারপতি এসকে সিনহা সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আবেদন জানানো হয়। আদালত শুনানি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।
৭ ফেব্রম্নয়ারি, ২০০০ : বিচারপতি মোঃ নূরুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ মোমতাজ উদ্দিন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির জন্য আবেদন জানায়। আদালত জানায়, এ বিষয়ে তাদের শুনানি গ্রহণ সম্ভব নয়।
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ : বিচারপতি মোঃ নূরম্নল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ মোমতাজ উদ্দিন সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মামলার শুনানির জন্য সরকার পক্ষ আবারও আবেদন। আদালত তাদের নির্ধারিত কাজে ব্যসত্মতার কারণ দেখিয়ে পরে আসার পরামর্শ দেয়।
৩০ মার্চ, ২০০০ : বিচারপতি আমিরম্নল কবীর চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ আব্দুল আজিজ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে মামলা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম মামলায় পলাতক ১১ আসামীর জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগের আদেশ প্রদানের আবেদন। আসামী বজলুল হুদার পক্ষ অতিরিক্ত পেপার বুক প্রস্তুতের জন্য আবেদন জানানো হয়। ২ এপ্রিল, ২০০০ : পলাতক ১১ আসামীর জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগের নির্দেশ। প্রত্যেককে পেপার বুক সরবরাহ করতে নির্দেশ। বজলুল হুদার পক্ষ পেপার বুক সংক্রান্ত আবেদনের নিষ্পত্তির জন্য তারিখ নির্ধারণ।
৬ এপ্রিল, ২০০০ : আসামি বজলূল হুদার আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার পক্ষের জবাব দাখিল। আসামিপক্ষ এ বিষয়ে শুনানির জন্য সময় নেয়।
১০ এপ্রিল, ২০০০ : বিচারপতি আমিরুল কবীর চৌধুরী ও বিচারপতি এমএ আজিজ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি গ্রহণ বিব্রতবোধ করছেন জানিয়ে মামলাটির পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।
২০ এপ্রিল ২০০০ : প্রধান বিচারপতির নির্দেশে মামলাটি বিচারপতি এমএম রুহুল আমিন ও বিচারপতি মোঃ আব্দুল মতিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে বিচার নিষ্পত্তি করতে নির্ধারণ করা হয়।

২৪ এপ্রিল, ২০০০ : বিচারপতি এমএম রুহুল আমিন ও বিচারপতি মোঃ আব্দুল মতিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানির গ্রহনের বিব্রতবোধ করছেন জানিয়ে মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।
বিকাল চারটায় প্রধান বিচারপতি সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে বৈঠক। হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন। বিচারপতি মোঃ রুহুল আমিন ও বিচারপতি এবিএম খাইরুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চকে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি গ্রহনের জন্য নির্ধারণ করা হয়। এই বেঞ্চকে দায়িত্ব দেয়া হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানি গ্রহণের জন্য।
২৫ এপ্রিল, ২০০০ : বিচারপতি মোঃ রম্নহুল আমিন ও বিচারপতি এবি এম খায়রুল হক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদনের শুনানির জন্য দৈনিক কার্যতালিকায় ১২ নং ক্রমিকভুক্ত করা হয়।
৩ মে, ২০০০ : মামলার পেপার বুক পুনর্গঠন সংক্রান্ত আসামি বজলুল হুদার আবেদন নাকচ। পলাতক আসামিদের জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ করতে সলিসিটরকে নির্দেশ।
৯ মে, ২০০০ : বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্সের শুনানির পূর্বে নতুন মামলা তালিকাভুক্ত নিয়ে নির্ধারিত বেঞ্চের বিচারপতিদের মতানৈক্য।
১১ মে, ২০০০ : দুই বিচারপতির মতানৈক্যের নিষ্পত্তি করেছেন প্রধান বিচারপতি। ১৫ মে , ২০০০ : পলাতক ১১ আসামীর প্রত্যেকের জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগের তালিকা আদালতের অনুমোদন।
২৫ জুন, ২০০০: মামলার শুনানি স্থগিত রাখার জন্য আবেদন। হাইকোর্ট সে আবেদন খারিজ করে দেয়। ২৭ জুন, ২০০০ : বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদন হাইকোর্টের দৈনিক কার্যতালিকার ক্রমানুসারে শুনানি গ্রহণ শুরু।

২৮ জুন, ২০০০ : শুনানির শুরুতেই আসামি পক্ষ লিখিত আপত্তি দাখিল করে। সরকার পক্ষ বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগের বৈধতার প্রশ্ন করে আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুতকৃত পেপার বুক যথাযথ হয়নি দাবি করা হয়। এ বিষয়ে শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করে। নিয়ম অনুযায়ী আপিলের শুনানি প্রথম গ্রহণ করা হয়। সে হিসাবে আসামি পক্ষ থেকে মামলার পেপার বুক পাঠ করে আদালতে শুনানি শুরু হয়।
৩০ জুন, ২০০০ : সরকার পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিরাজুল হকের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ। মামলার পেপার বুক যথাযথ হয়নি। অতিরিক্ত বা পূর্ণ পেপার বুক প্রস্তুতের জন্য আসামি পক্ষের পৃথক তিনটি আবেদন। ৪ জুলাই, ২০০০ মোঃ সিরাজুল হকের নিয়োগ বৈধ ঘোষণা। আসামি পক্ষের আবেদনের একাংশ গৃহীত অনুযায়ী সম্পূরক পেপার বুক প্রস্তুতের নির্দেশ।
৯ জুলাই, ২০০০ : তাহের ঠাকুরসহ ৪ জনের খালাসের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিল করছে কি-না জানানোর জন্য ডেপুটি এটর্নি জেনারেল সামসুদ্দিন চৌধুরীকে নির্দেশ।

১০ জুলাই, ২০০০ : আসামি ফাুরুক ও শাহরিয়ারের স্বীকারোক্তি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনটি সম্পূরক পেপার বুক হিসাবে অন্তুর্ভুক্ত।
১১ জুলাই, ২০০০ : পেপার বুক পুনর্গঠন সংক্রান্ত লিভ আপিল শুনানি স্থগিত রাখার জন্য বজলুল হুদার কৌঁসুলির আবেদন।
আদালত তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত ঘোষণা। ১৬ জুলাই : ২০০০ : পেপার বুক থেকে পাঠ করে শুনানি শেষ হয়। ১৮ জুলাই , ২০০০ : আপিল শুনানিতে আসামি পক্ষের কৌঁসুলিদের সওয়াল জবাব শুরু। ২৫টি কার্যদিবসে তাদের বক্তব্য প্রদান সম্পন্ন করে।
১৭ আগস্ট ২০০০ : হাইকোর্টের দুই বিচারপতি খাস কামরায় ফারুক, রশিদের দেয়া সাক্ষাত কালের ভিডিও ক্যাসেটটি দেখেন। ২৪ আগস্ট, ২০০০ থেকে ১৪ অক্টোবর, ২০০০ পর্যন্ত শরৎকালীন ৫১ দিনের ছুটিতে শুনানি মুলতবি। ২২ অক্টোবর, ২০০০ : সরকার পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সিরাজুল হক সওয়াল জবাবের শুনানিতে অংশ নেন। ২৯ অক্টোবর, ২০০০ : সিরাজুল হক অসুস্থ হয়ে পড়ায় শুনানি এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত।
৫ নভেম্বর ২০০০ : সিরাজুল হক পুনরায় শুনানিতে অংশ নেন। ১৪ দিনব্যাপী বক্তব্য পেশ করেন। মোট ২০ দিন সরকার পক্ষ থেকে সওয়াল জবাবে শুনানি করা হয়।
২৯ নভেম্বর : ২০০০ : বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল আবেদনের শুনানি হাইকোর্ট ৬৩টি কার্যদিবসে শেষ করে। এদিন আদালত সিএভি রায়ের জন্য প্রতীক্ষিত বলে আদালত মুলতবি ঘোষণা করে। ১৪ ডিসেম্বর, ২০০০ : হাইকোর্ট থেকে দ্বিমতে বিভক্ত রায় ঘোষণা। ১৪ জানুয়ারি, ২০০১ : ডেথ রেফারেন্স বেঞ্চের বিভক্ত রায় নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে প্রধান বিচারপতির কাছে প্রেরণ। ১৫ জানুয়ারি, ২০০১ : বিচারপতি ফজলুল করিমকে তৃতীয় বিচারপতি নিয়োগ করে হাইকোর্ট পর্যায়ে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল নিষ্পত্তির দায়িত্ব অর্পণ।
১৭ জানুয়ারি, ২০০১ : তৃতীয় বিচারপতির আদালত প্রথম বসে এবং তিনি শুধু দ্বিমত থাকা আসামিদের বিষয়ে শুনানি করবেন বলে সিদ্ধান্তদেন। ২৪ জানুয়ারি, ২০০১ : লে. কর্নেল মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি- স্ত্রী শাহিদা মহিউদ্দিন ডিমান্ড অব জাস্টিস নোটিশ পাঠান।
১২ ফেব্রম্নয়ারি ২০০১ : তৃতীয় বিচারপতির আদালতের শুনানি শুরু। ১৯ এপ্রিল ২০০১ : শুনানি শেষ।
৩০ এপ্রিল ২০০১: তৃতীয় বিচারপতির সিদ্ধান্ত ঘোষণার মধ্য দিয়ে হাইকোর্ট পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তি। তৃতীয় বিচারপতি ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেন। চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদ- বহাল থাকা ১২ আসামির মধ্যে পরে ওই বছরই কারাবন্দি চার আসামি আপিল বিভাগে লীভ টু আপিল করে।
২০০২-২০০৬ সাল : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি গোলাম রাববানী, বিচারপতি জেআর মোদাচ্ছির হোসেন, বিচারপতি কে এম হাসান ও বিচারপতি আবু সাঈদ আপিলের শুনানিতে বিব্রতবোধ করেন। এক পর্যায়ে মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়।
১৩ মার্চ ২০০৭ : মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর আসামি ল্যান্সার একে এম মহিউদ্দিন আহমেদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার।
১৮ জুন ২০০৭ : মৃত্যুদ-প্রাপ্ত অপর আসামি ল্যান্সার একে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ২৪ জুন ২০০৭ : ল্যান্সার মহিউদ্দিনের জেল আপিল।
২ আগস্ট ২০০৭ : হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের দায়ের করা লিভ টু আপিলের ওপর শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন।
৭ আগস্ট ২০০৭ : বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি জয়নাল আবেদীন ও বিচারপতি মোঃ হাসান আমিনের আপিল বিভাগের বেঞ্চ বঙ্গবন্ধুহত্যা মামলার লীভ টু আপিলের ওপর শুনানির জন্য গঠন করা হয়।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ : আপিল বিভাগ ২৬ কার্যদিবস শুনানি গ্রহণ করে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত পাঁচ আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ (লীভ মঞ্জুর) করে।
৩০ অক্টোবর ২০০৭ : পেপারবুক তৈরি করে জমা দিতে আসামি পক্ষর শেষ সময়। তারা পেপারবুক ও যুক্তির সংক্ষিপ্ত সার আদালতে জমা দেয়। ২৪ আগস্ট ২০০৯ : আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপিল শুনানির জন্য ৫ অক্টোবর তারিখ ধার্য করে দেন।
৪ অক্টোবর ২০০৯ : মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতে শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পাঁচ বিবিচারপতিকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন।
বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মোঃআব্দুল আজিজ, বিচারপতি বিজন কুমার দাস, বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসনে ও বিচারপতি সুকেন্দ্র কুমার সিনহা।
৫ অক্টোবর ২০০৯ : সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি শুরু। ১২ নভেম্বর ২০০৯ : সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি ২৯ কার্যদিবসে শেষ হলো।

১৯ নভেম্বর ২০০৯ : বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায়ের তারিখ ঘোষণা ও তৃতীয় বেঞ্চের রায় বহাল পাঁচ আসামির আপিল খারিজ। ২৪ জানুয়ারি রিভিউ পিটিশনের ওপর শুনানি শুরম্ন। ২৭ তারিখ পিটিশনের খারিজ করে দিয়ে রায় বহাল। ওই দিনই অর্থাৎ ২৭ জানুয়ারি রাত ১২.১ মিনিটে হুদার ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে অপর ৪ আসামিরও ফাঁসি কার্যকর করা হয়। শেষ হয় একটি প্রতিষ্ঠিত কালো অধ্যায়ের।

উপসংহার: যাদের এখনও ফাঁসি কার্যকর হয় নাই তাদের ধরে এনে অবিলম্বে রায় কার্যকর এই সরকারকেই করতে হবে। তা না হলে এ নিয়ে আর একটি ইনডিমিনিটি হতে পারে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা ওদের ফাঁসির বাস্তবায়ন চাই। সাথে সাথে এই শোককে শক্তিতে রুপান্তরিত করে ঐ অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার শপথ নিতে হবে আজই। ১৫ আগষ্টের প্রেতাত্মা ও তাদের দোসররা আজও সক্রিয়।

লেখক:-
নির্বাহী সম্পাদক,
দৃক নিউজ২৪.কম

সূত্র:- বিভিন্ন সংবাদপত্র ও ইন্টারনেট

     More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা

 

 

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ভোর ৫:০২
  • দুপুর ১১:৪৭
  • বিকাল ৩:৩৬
  • সন্ধ্যা ৫:১৫
  • রাত ৬:৩১
  • ভোর ৬:১৬