দৃক নিউজ২৪ ডেস্ক:–
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে অব্যাহত বালু ক্ষয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য।
চলতি বর্ষা মৌসুমের অস্বাভাবিক জোয়ারে এ ভাঙ্গন আরো তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সৈকত লাগোয়া নারিকেল বাগানসহ জাতীয় উদ্যোনের শত শত গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এছাড়া সৈকতে বসা ক্ষুদে দোকানিদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরও অনেকবার স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের সমুদ্রের অব্যাহত ভাঙ্গনে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে কুয়াকাটা সৈকত। এতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় ও অব্যাহত বালু ক্ষয়ে সৈকত লন্ডভন্ড হয়ে গেছে।
গত ১০ বছরের ব্যবধানে লতাচাপলী মৌজার কয়েক হাজার একর জমি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে কুয়াকাটার মূল রক্ষা বাঁধসহ সবুজ বেষ্টনি, কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান ও মসজিদ-মন্দির। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তোরে সৈকতের বালু ক্ষয়ের কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৮নং পোল্ডারের খাজুরা-মাঝিবাড়ি ও মিরাবাড়ি অংশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
এছাড়া কুয়াকাটা ফার্মস এন্ড ফার্মস নামে বাগানটির নামকরণ থাকলেও সারি সারি নারিকেল গাছ থাকায় নারিকেল বাগান হিসেবেই সকলের কাছে পরিচিত ছিল। গাড়ি পার্কিং, পিকনিক স্পট,পর্যটকদের বিনোদন কেন্দ্র ছিল এ বাগানটি। কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও কালের বিবর্তনে বাগানটি আজ শুধুই স্মৃতি।
কুয়াকাটার এক প্রবীণ ব্যক্তিত্ব শত্তরোর্ধ শাহ-আলম শেখ বলেন, পটুয়াখালী জেলার বাউফল থেকে এসে ১৯৬৪ সালে বনজঙ্গল পরিষ্কার করে প্রয়াত ফয়েজ মিয়া কুয়াকাটা সৈকতে বাগান সৃজন শুরু করেন। দেশি বিদেশী অনেক ফলের গাছ লাগিয়ে ছিলেন। যা এখন বিলুপ্ত প্রায়। বাগানে বাঘ, বানর, শিয়াল, শুকর, সাপ, গুইসাপ, সজারু ছিল অনেক। ভয়ে মানুষ বাগানের মধ্যে যেতে চাইতনা। আমারা তা দেখেছি। এখন তার কিছুই নাই। আর কিছুদিন পরে ওই সব দৃশ্য চোখে দেখারও লোক থাকবে না।
কুয়াকাটার বাসিন্দা মো.ইয়াকুব আলী বলেন, আমরা স্থায়ী ও মজবুত বাঁধ চাই। খাজুরা গ্রামের জেলে আবদুল জব্বার বলেন, অমাবইস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারের সময় সাগরে পানির চাপ বাড়লে মোরা ভয়ের মধ্যে থাকি।
কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব জানান, কুয়াকাটা বীচ প্রটেকশনের কাজ দ্রুত শুরু না করলে অবশিষ্ট সৈকত চরম দুরাবস্থায় পড়বে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে প্রচন্ড ঢেউয়ের আঘাতে বালুক্ষয় হচ্ছে। এতে সৈকতের বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছের মূল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়া অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.আবুল খায়ের জানান, কুয়াকাটা বীচ রক্ষা প্রকল্পের কাজের পরিকল্পনা চলছে। তবে কবে নাগাদ এ কাজ শুরু হবে তা তিনি সাংবাদিকদের জানাতে পারেননি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড.মাসুমুর রহমান জানান, কুয়াকাটা সৈকতের বালুক্ষয়ে বাগানটি ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে। তবে সৈকতের বালুক্ষয়রোধে সরকার ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে যা অচিরেই কাজ শুরু করা হবে।
More News Of This Category