উদ্বোধনী জুটি ছুটছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। ছুটছে সিলেট সিক্সার্সের জয়রথ। রাজশাহী কিংসকে ৩৩ রানে হারিয়ে ঘরের মাঠে জিতল তারা টানা তৃতীয় ম্যাচ। গতবারের রানার্সআপ রাজশাহী হারল প্রথম দুই ম্যাচই।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সিলেট ২০ ওভারে তোলে ৬ উইকেটে ২০৫ রান। শুরুতে চ্যালেঞ্জ জানানোর ইঙ্গিত দিয়েও শেষ পর্যন্ত রাজশাহী করতে পারে ১৭২ রান।
আগের দুই ম্যাচে রান তাড়ায় যেমন ছিলেন, প্রথমবার আগে ব্যাটিংয়েও সিলেটকে তেমনি দুর্দান্ত সূচনা এনে দেন থারাঙ্গা ও ফ্লেচার।
শুরুটা করেছিলেন ফ্লেচার। প্রথম ওভারে ফরহাদ রেজাকে চার মারার পর পর দ্বিতীয় ওভারে টানা চার-ছক্কা কেসরিক উইলিয়ামসকে।
তৃতীয় ওভারে তরুণ পেসার হোসেন আলিকে পেয়ে বসেন দুজনই। সহজাত গতির ঝলক দেখালেও টি-টোয়েন্টিতে অভিষিক্ত পেসার ঠিক রাখতে পারেননি লাইন-লেংথ। থারাঙ্গা-ফ্লেচার দুজনই মারেন দুটি করে চার। ওই ওভার থেকে আসে ১৮।
মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম ওভারটি ভালো করলেও পরের ওভারে ফ্লেচার তাকে ওড়ান টানা দুটি ছক্কায়। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বিনা উইকেটে রান ৬৩। টানা তৃতীয় ম্যাচে দুজনের হাফসেঞ্চুরি জুটি।
ফিল্ডিং ছড়িয়ে পড়লেও কমেনি রানের গতি। দুজনই এগোতে থাকেন সমান তালে। একাদশ ওভারেই দলের রান স্পর্শ করে একশ।
অপ্রতিরোধ্য এই জুটি শেষ পর্যন্ত থামে রান আউটে। দ্বিতীয় রান নেওয়ার চেষ্টায় ফেরেন ফ্লেচার। ৩০ বলে করে যান ৪৮ রান।
ওই ওভারেই থারাঙ্গা ছুঁয়ে ফেলেন ফিফটি, ৩৫ বলে। তিন ম্যাচে লঙ্কান ওপেনারের তৃতীয় পঞ্চাশ। তবে আউট হয়ে যান পরের ওভারেই।
তবে লঙ্কান অধিনায়ক ব্যাটন দিয়ে যান যোগ্য এক স্বদেশীর হাতে। বিপিএল প্রথমবার খেলতে নেমেই উত্তাল দানুশকা গুনাথিলাকার ব্যাট। ৩ ছক্কায় ৪২ করেন ২২ বলে।
সেই ঝড়কে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত বইয়ে দেন রস হোয়াইটলি। গত ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে ওভারে ছয়টি ছক্কা মেরে আলোয় আসা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান দেখিয়েছেন তার পেশির জোর। ফরহাদ রেজাকে ৯৬ মিটার ছক্কার পর মেরেছেন টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় ছক্কা, ১০৯ মিটার!
১২ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকে হোয়াইটলি। শেষ ৬ ওভারে সিলেট তোলে ৮১ রান! বিপিএলে প্রথমবার দুশ রানের দেখা পায় সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি।
বিশাল রান তাড়ায় যেমনটি দরকার, রাজশাহীতে তেমন সূচনাই এনে দিয়েছিলেন মুমিনুল হক ও লুক রাইট। ৫.১ ওভারেই এই জুটি তুলে ফেলে পঞ্চাশ। এরপরই ধাক্কা। রাজশাহী উইকেট হারায় জোড়ায় জোড়ায়।
দুই ছক্কায় ১৬ বলে ২৪ রান করা মুমিনুল আউট হন লিয়াম প্লাঙ্কেটকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। এক বল পরই প্লাঙ্কেট ফিরিয়ে দেন আগের ম্যাচে রাজশাহীর সেরা ব্যাটসম্যান রনি তালুকদারকে।
বড় ভরসা মুশফিকুর রহিম ব্যর্থ আবারও। মুশফিক ও সামিত প্যাটেলকে এক ওভারে ফেরান আবুল হাসান। রাজশাহীর রান তখন ৪ উইকেটে ৭৯।
লুক রাইট তখনও টিকে। জেমস ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে তার জুটি আবার জাগায় তাদের জয়ের আশা। কামরুল ইসলাম রাব্বির ১ ওভারে ১৮ নেন দুজন। জুটির পঞ্চাশ আসে ২৮ বলেই।
শেষ পর্যন্ত সেই রাব্বির বলেই ভেঙেছে ৫৪ রানের জুটি। ছক্কা মারার পর আরও একটির চেষ্টায় রাইট ধরা পড়েন সীমানায়। ৩৯ বলে চার ছক্কায় করেছেন ৫৬।
রাজশাহীর শেষ আশাও শেষ হয়ে যায় খানিক পর। দ্রুত একটি রান চুরির চেষ্টায় ধাক্কা লাগে ফ্রাঙ্কলিন ও ড্যারেন স্যামির। প্লাঙ্কেটের ‘ফুটওয়ার্কে’ রান আউট ২৩ বলে ৩৫ রান করা ফ্রাঙ্কলিন। ঝড় তুলতে পারেননি স্যামিও।
শিশির ভেজা বল নিয়েও দারুণ গতি বৈচিত্রের প্রদর্শনীতে তিনটি করে উইকেট নেন আবুল হাসান ও লিয়াম প্লাঙ্কেট।
তবে জয়ের বীজ বুনে দিয়েছিল সিলেটের উদ্বোধনী জুটিই। যেটির হাত ধরেই এসেছে আরেকটি জয়ের সুমিষ্ট ফল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট সিক্সার্স: ২০ ওভারে ২০৫/৬ (থারাঙ্গা ৫০, ফ্লেচার ৪৮, সাব্বির ১৬, গুনাথিলাকা ৪২, হোয়াইটলি , প্লাঙ্কেট ৬, নুরুল ০, আবুল হাসান ; ফরহাদ ১/৪১, উইলিয়ামস ২/৩৯, হোসেন ০/৩৬, মিরাজ ০/২০, সামিত ০/২৫, ফ্রাঙ্কলিন ১/৩৮)।
রাজশাহী কিংস: ২০ ওভারে ১৭২/৮ (মুমিনুল ২৪, রাইট ৫৬, রনি ০, মুশফিক ১১, সামিত ০, ফ্রাঙ্কলিন ৩৫, স্যামি ৯, ফরহাদ ১৫*, মিরাজ ৮, উইলিয়ামস ১*; নাসির ০/৩৩, কামরুল ১/৫৪, তাইজুল ০/৩১, আবুল হাসান ৩/২২, প্লাঙ্কেট ৩/২৯)।
ফল: সিলেট সিক্সার্স ৩৩ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: দানুশকা গুনাথিলাকা