মো: জামাল হুসাইন:- রাজধানী ছাড়াও ঢাকার একটি পুরনো পরিচয় আছে তাহলো, ‘মসজিদের শহর’। চট্টগ্রামকে ডাকা হয় বন্দরনগরী। চা বাগান আর ছোট ছোট টিলার অনুপম প্রাকৃতিক সবুজ শ্যামল সৌন্দর্য্যে ঘেরা সিলেটের অপর নাম ‘পুণ্য ভূমি।’
দুই প্রসিদ্ধ সুফি-সাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) ও হযরত শাহ পরান (রঃ) রয়েছেন এ শহরেই শায়িত। দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষ ওই দুই মহাপুরুষের মাজার ও দরগায় ফাতেহা পাঠ এবং জিয়ারত করতে আসেন। যে উদ্দেশ্যেই সিলেটে আসুন না কেন, হযরত শাহজালাল (রঃ) ও হযরত শাহ পরান (রঃ) এর মাজার জিয়ারত না করে যান খুব কম সংখ্যক মানুষ।
সেই পুণ্য ভূমি সিলেটে এখন অন্যরকম প্রাণচাঞ্চল্য। শহরে একটা উৎসব-উৎসব আমেজ বিরাজ করছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র গুলোয় পা রাখতেই চোখে পড়বে বড় বড় তোরণ। স্কুল-কলেজে পড়া কিশোর, যুবা, তরুণ-তরুণীদের মাঝে একটা সাড়া পড়ে গেছে। সবাই ক্রিকেট উৎসব আর আনন্দে মাতোয়ারা। টিকিট পেতে ভোগান্তি, ব্যাংক না বিসিবি বুথ? এই করতে করতে নাভিঃশাষ ওঠার জোগাড় শেষে আজ সেই কাংখিত বিপিএলের পর্দা উঠছে।
সঙ্গে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য, ২০০ টাকা গ্যালারির টিকিট ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । এ সব প্রাণ চাঞ্চল্য আর উৎসবের উপলক্ষ একটাই; বিপিএল।আজ শনিবার দুপুর দুটায় শুরু হয়ে যাবে চার-ছক্কার হৈ হৈ উৎসব, এ অঞ্চলের জনপ্রিয় ও সাড়া জাগানো ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি আসর, বিপিএলের।
বিপিএলের এটা পঞ্চম আসর; কিন্তু এবারের আসরে একটা নতুনত্ব আছে। তাহলো, রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পর তৃতীয় শহরে বিপিএল। আগের চারবার শুধু ঢাকার শেরে বাংলা ও চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা হয়েছে। এবার বিপিএল নগরি হলো সিলেট।
আগের চারবারই শেরে বাংলায় পর্দা উঠেছে। এবার সে ধারা পাল্টে বিপিএল মাঠে গড়াবে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। হঠাৎ কি এমন হলো যে, রাজধানী ঢাকা এমনকি চট্টগ্রামেরও বাইরে খেলা শুরু? প্রশ্ন অনেকের মনে। কারণ, একটাই। তবে কোন ক্রিকেটীয় ব্যাপার-স্যাপার নেই সেখানে।
উল্লেখ্য, ঢাকায় ঠিক এই সময় হবে কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারিয়ান্সের কনফারেন্স। গত ১ নভেম্বর থেকে তা শুরুও হয়েছে। সেই কনফারেন্স উপলক্ষে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধি এখন ঢাকায়। রাজধানীর সব পাঁচ তারকা হোটেলে সেই প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বিপিএলের সাত দলের ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফ, ম্যাচ অফিসিয়ালস এবং আয়োজক-ব্যবস্থাপকদের থাকার জায়গা সংকুলান হবে না। মূলতঃ এই কারণে এবার ঢাকায় শুরু হচ্ছে না বিপিএল। সে কারণেই এবার সিলেট দিয়ে শুরু আসর। সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার থেকে চার কিলোমিটার দূরে, লাক্কাতুরা চা বাগানের ভিতরে মাঠ। বাংলাদেশের কোন ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সঙ্গে যার নির্মান শৈলির মিল নেই। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড, মিডিয়া ভবন- সব কিছুতেই একটা বৃটিশ স্থাপনার ছোঁয়া।
মূল গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ছাদ শেরে বাংলা কিংবা জহুর আহমেদ চৌধুরী বা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামের মত নয়। লাল টালির ছাদ। এ মাঠে কোন টেস্ট হয়নি। একদিনের খেলাও হয়নি। তবে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে হওয়া বিশ্ব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরের ছয়টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে।
কার্তিকের মাঝামাঝি, হেমন্তের আগমনী বার্তা বাতাসে। শীত না আসলেও শীতের আমেজ টের পাওয়া যাচ্ছে। তবে রাজধানী ঢাকার তুলনায় দিনের বেলা গরমের মাত্রা বেশি সিলেটে। রাতে খানিক ঠান্ডা। সব মিলে চমৎকার সহনীয় আবহাওয়া।
শহরের কোলাহল থেকে একটু দুরে নাজিমগড় রিসোর্ট, আর শহরের প্রাণকেন্দ্রে রোজ ভিউ হোটেল এখন দেশ বিদেশের তারকা ক্রিকেটারদের সরব উপস্থিতিতে ঠাসা। ভারতের আইপিএলের মত বিপিএল শুরু থেকে সাড়া জাগিয়েছে।
মোহাম্মদ আশরাফুলের ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা ২০১৩ সালের দ্বিতীয় আসরে। শতভাগ নিশ্চিদ্র আর সাজানো-গোছানো ও সু-ব্যবস্থাপনার ছাপ না আসলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে বিপিএলে ভুল-ক্রুটি কমতে শুরু করেছে। আগের চেয়ে ব্যবস্থাপনায়ও এসেছে দক্ষতার ছাপ।
ভারতের আইপিএলের মত অত বেশি সংখ্যার শীর্ষ ও বিশ্ব তারকার সমারোহ নেই। তারপরও বিপিএলেও ভারত, অস্ট্রেলিয়া ছাড়া সব টেস্ট খেলুড়ে দেশের নামি-দামি তারকার মিলন মেলা বসেছে। এবার তো একঝাঁক বিশ্ব তারকার অংশ নেয়ার কথা।
ক্রিস গেইল, ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, কুমার সাঙ্গাকারা, আফ্রিদি, সুনিল নারিন আর মোহাম্মদ আমিরের মত তারকার দেখা মিলবে এবার।
মাত্র ২০ ওভারের ম্যাচ; কিন্তু পরিপূর্ণ প্যাকেজ। চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি। দর্শক বিনোদনের খোরাক ও রসদে পরিপূর্ণ। ধৈর্য্য ধরে, কাজ কর্ম ফেলে পাঁচ দিন খেলা দেখায় যাদের উৎসাহ কম, সৃষ্টি-সৃজনশীল ও শৈল্পিক ক্রিকেটের চেয়ে যারা চার-ছক্কার ফুলঝুৃড়ি ও রানের ফলগুধারা বেশি দেখতে পছন্দ করেন- তাদের প্রথম পছন্দ এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।
৫০ ওভারের ম্যাচের দর্শকপ্রিয়তা আগের মত থাকলেও টি-টোয়েন্টির মজাই আলাদা। ক্রিকেটের প্রথাগত, ব্যাকরণসম্মত ব্যাটিং-বোলিং এখানে অনুপস্থিত। তার বদলে অনেকটাই ধুমধাড়াক্কা মার-মার কাট-কাট; কিন্তু খেলা দেখায় আছে অন্যরকমের আনন্দ।
তাই তো ভারতের আ্ইপিএল এখন বিশ্বের অত্যম আকর্ষণীয় ক্রিকেট আসর। আকার, আয়তন আর বাজার ও বাজেট হয়ত অতবড় নয়, তারপরও বাংলাদেশের বিপিএলও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকায় জাতীয় দলের চরম ব্যর্থতা ও ভরাডুবির পর বিপিএল দেখতে মুখিয়ে সবাই।
সিলেট পর্বের আয়ুষ্কাল মোট পাঁচ দিন। তবে খেলা হবে ৪ দিন। ৪ ও ৫ নভেম্বর দু’দিন টানা খেলার পর ৬ নভেম্বর বিশ্রাম। ৮ নভেম্বর রাতেই ইতি এ পর্বের। এরপর আবার দু’দিন বিরতি। ১১ নভেম্বর শুরু ঢাকা পর্ব। চলবে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর বিপিএল চলে যাবে চট্টগ্রামে। বন্দর নগরীতে খেলা শুরু ২৪ নভেম্বর। ২৯ ওই পর্ব শেষে শেষ রাউন্ড আবার শেরে বাংলায়। ১২ ডিসেম্বর ফাইনাল।
সূত্র: অনলাইন
More News Of This Category