দৃক নিউজ২৪ ডেস্ক:- বাংলাদেশের বোলিং শক্তি মানেই স্পিনারদের ঘূর্ণিবল। হোক তা টেস্ট কিংবা ওয়ানডে, বাংলাদেশের যত বোলিং সাফল্য তার বড় অংশই এসেছে স্পিনারদের হাত ধরে।
সেই মোহাম্মদ রফিক, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, এনামুল হক মনি, এনামুল জুনিয়র, আব্দুর রাজ্জাক, মানজারুল ইসলাম রানা, সাকিব আল হাসান, ইলিয়াস সানি, সোহাগ গাজী, আরাফাত সানি আর মেহেদী হাসান মিরাজরাই গত দেড় যুগ বাংলাদেশের বোলিং অস্ত্র হিসেবে কার্যকর অবদান রেখেছেন। এখনো রাখছেন।
যে কোন কন্ডিশনে এখনো বাংলাদেশের বোলিং ট্রাস্পকার্ড সাকিব আল হাসান। এই বাঁ-হাতি স্পিনারের স্পিন ঘূর্ণির ওপরই টাইগারদের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর কওে; কিন্তু শুধু স্পিন দিয়ে তো আর চলে না। প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হলে আর জিততে দরকার ধারালো পেস ডিপার্টমেন্ট।
বাংলাদেশে যে কখনো ভাল মানের পেস বোলার ছিল না- এমন নয়। ইনজুরির ভয়াল থাবায় আক্রান্ত হবার আগে মাশরাফি বিন মর্তুজা বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন। আগে ও পরে হাসিবুল হোসেন শান্ত, সাইফুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, খালেদ মাহমুদ সুজন, মঞ্জুরুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন রাজিবদের পর এখন রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শুভাশিস রায় ও কামরুল ইসলাম রাব্বিরাই পেস আক্রমণের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
কিন্তু শুনতে কানে লাগলেও কঠিন সত্য হলো, স্পিন আক্রমণের তুলনায় বাংলাদেশের পেস ডিপার্টমেন্ট সব সময়ই কমজোরি। দূর্বল ও ধারহীন। তারপরও মাঝে, বিশেষ করে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া শেষ বিশ্বকাপ এবং তারপর ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার মত পরাশক্তির বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন সিরিজ বিজয়ে পেসাররা রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা।
ভারতের বিপক্ষে ২-১ এ ওয়ানডে সিরিজ বিজয়ের প্রধান রূপকার বাঁ-হাতি মোস্তাফিজুর রহমান। ওই সিরিজ বিজয়ের স্থপতি হিসেবে সিরিজ সেরাও কাটার মাস্টার। ভারত সিরিজের আগে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনেও পেসাররা রেখেছেন বড় ভুমিকা; কিন্তু সময়ের প্রবাহমানতায় সেই পেস বোলিং ডিপার্টমেন্ট ক্রমেই নিস্তেজ। নির্জীব।
একদম শতভাগ পেস বোলিং উপযোগি কন্ডিশন ছাড়া স্পোর্টিং উইকেট আর ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচে বাংলাদেশের পেস বোলিং নেহায়েত দূর্বল। কমজোরি ও ধারহীন। এই তো গত জুনে ইংল্যান্ডে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, যেখানে পাকিস্তানের পেসাররা বাজিমাত করেছেন। আনকোরা হাসান আলি সেমিফাইনাল ও ফাইনালসহ চার ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশের পেসাররা ব্যর্থতার ঘানি টানছেন।
ভারতের সাথে সেমিফাইনালে ২৬৪ রানের বড় স্কোর গড়েও তাই ৯ উইকেটের হার থেকেছে সঙ্গী। সেটাই শেষ নয়। কাল রোববার কিম্বার্লির ডায়মন্ড ওভাল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭৮ রানের বড়-সড় স্কোর হাতে নিয়েও চরম ব্যর্থ বাংলাদেশের পেসাররা।
অথচ পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনসহ এ ম্যাচে চার পেসার (মাশরাফি, রুবেল ও তাসকিন) মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। মাশরাফি ছাড়া বাকিরা ব্যর্থতার ঘানি টেনেছেন। মাশরাফি ৮.৫ ওভারে ৫০, রুবেল ৬ ওভারে ৩৭, তাসকিন ৮ ওভারে ৬১ আর সাইফউদ্দিন ৫ ওভারে ৪৬ রান দিয়েছেন।
মোট কথা, এই চার পেসারের ২৭.৫ ওভারে উঠেছে ১৯৪ রান। আর তাতেই ম্যাচ চলে গেছে প্রোটিয়াদের হাতে। তাদের ব্যর্থতায় ১০ উইকেটের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটেছে। এই যে পেস বোলারদের চরম অকার্যকরিতা। তা নিয়ে রাজ্যের প্রশ্ন উঠেছে।
অনেকেরই প্রশ্ন, বাংলাদেশের পেস বোলিং কি সত্যিই দূর্বল? বড় দলের বিপক্ষে স্পোর্টিং উইকেট আর ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি পিচে পেস বোলাররা কেন এত অসহায় ? এটা কি সামর্থে ঘাটতি? নাকি অভিজ্ঞতা, দক্ষতা প্রদর্শনের মুন্সিয়ানা আর কলাকৌশল কম, তাই।
More News Of This Category