নিজস্ব প্রতিবেদক:- সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের নলজুর নদীর দুই সেতুতেই যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নলজুরের বিকল্প বেইলি সেতু পানিতে নিমজ্জিত হওয়াতে গত সোমবার থেকে সবধরণের যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সদরের ডাক বাংলো সেতু দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ সরো এ সেতুটি অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে পড়লে বড় ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। সদরের এ দুইটি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় লাখো মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। তবে বিকেলের দিকে প্রশাষনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যানচলাচল করতে দেখা গেছে।
এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের গুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি টেকসই থাকলেও একসঙ্গে বড়দুটি যান চলাচল করতে না পারায় যানজটের সৃষ্টি হয়। যে কারণে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির মাধ্যমে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পুরাতন এ সেতু ভেঙে নতুন দৃষ্টি নন্দন আর্চ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান গত ২৬ মার্চ সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন করলে নতুন সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিকল্প হিসেবে একটি বেইলি সেতু পৌরশহরের হেলিপ্যাড এলাকায় নির্মাণ করা হয়।
এলাকার লোকজনের অভিযোগ, বিকল্প সেতুটি তৈরির সময় এলাকার লোকজন বর্ষায় এটা ডুবে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আরো উঁচু করার দাবি জানিয়েছিলেন তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডি বিষয়টি আমলে দেয়নি।
অপর দিকে ১৯৮৮ সালে নলজুর নদীর ওপর ডাকবাংলো রোডের সেতুটি এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সেতুর কাজ শেষ হয়। সেই থেকে সরো এ সেতু দিয়ে ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করে। ২০২১ সালে নলজুর নদী খনন কালে সেতুর পিলারের কাছ থেকে খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার সময় সেতুর দুটি অংশ দেবে যায়। এক বছর যান চলাচল বন্ধ থাকার পর গত ২৩ মার্চ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জগন্নাথপুর পৌরসভার সেতু দেবে যাওয়া অংশে ষ্টীলের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি চালু করে।
এদিকে দুই সেতু দিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হওয়াতে পায়ে হেঁটে নদী পারাপার করতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
নদীর পশ্চিমাঞ্চলের পৌরশহরের ইকড়ছই এলাকার বাসিন্দা মুহিবুর রহমান বলেন, নদীর পূর্বাঞ্চলে সরকারী অফিস-আদালত, হাসপাতাল,সহ গুরুত্বপূর্ণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া বিভাগীয় সিলেট শহরে ওই অঞ্চল দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ যাতায়াত করতে হয়। দু’ই সেতুই অচল হয়ে পড়ায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা।
পূর্বাঞ্চলের জগন্নাথপুর পৌরসভার জগন্নাথপুর এলাকার বাসিন্দা কবির মিয়া বলেন, নদীর পশ্চিমে রয়েছে, জগন্নাথপুর পৌর কার্যালয়, জগন্নাথপুর থানা ও সদরের প্রধান হাট জগন্নাথপুর বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। প্রতিনিয়ত দুই পারের মানুষ দুইটি সেতু দিয়ে চলাফেরা করে আসছিলেন। সেতু চলাচলে অনুপযোগি হওয়াতে দুর্ভোগ বেড়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ বলেন, উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় স্থানীয়দের দাবী ছিল বিকল্প সেতুটি উচু করে স্থাপন করা। কিন্তুু তাঁদের দাবীকে উপেক্ষিত করে নিচু করে সেতু বসানোর কারণে ঢলে পানিতে তলিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতায় লাখো মানুষ জনদুর্ভোগে পড়েছেন।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ায় বিকল্প বেইলি সেতুর সংযোগ সড়ক ও সেতুটি ডুবে গেছে সেতুতেও পানি উঠেছে। তবে জনসাধারণের চলাচলের সুবিদার্থে সংযোগ সড়কে বালির বস্তা ফেলে উপযোগি করা হচ্ছে। এছাড়া বড়ধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ ডাক বাংলা সেতু দিয়ে যান চলাচল আমরা বন্ধ করে দিয়েছি।
More News Of This Category