নিজস্ব প্রতিবেদক:- বিজলী চমকানো মেঘলা আকাশ, নদ নদী পানিতে টাইটুম্ভ, ঝুঁকিতে রয়েছে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ। পাশে পাকা ধান রেখে ঘুমানোর উপায় নেই কৃষকের তাই সারারাত ফসল রক্ষায় এক বাঁধ থেকে আরেক বাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে কাটিয়েছেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ভূরাখালি, কামারখাল, গলাখাল, সাদিপুর, কাদিপুর, নাদামপুর, মজিদপুর, সুনুয়াখাই গ্রামের কৃষক ভাইয়েরা।
উপজেলার কয়েক শত কৃষকের প্রচেষ্টায় বোরোধান রক্ষায় তাদের নিঘুম রাত ও স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে হয়েছে। ফলে এখনো ঠিকে আছে সারা বছরের আহার জোগানোর স্বপ্ন।
কৃষক সুজন মিয়া বলেন, একমাত্র বোরো ফসলের ওপর তার সাত সদস্যর পরিবারের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। ৩০ কেদার (৩০ শতাংশে এক কেদার) জমিতে ধারদেনা করে বোরো আবাদ করেছি। ধান তুলতে পারলে ধারদেনা শোধ করে সারাবছর নিশ্চিন্তে চলতে পারবো। ফসল তুলতে না পারলে পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।
জেলার অন্যতম বৃহৎ হাওর নলুয়া ব্যষ্ঠিত চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুল ইসলাম বলেন, হাওরের ফসল রক্ষায় শতাধিক কৃষকরা সারারাত স্বেচ্ছায় নলুয়ার হাওরে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। ফসল রক্ষায় নির্মিত বেড়িবাঁধগুলোর টেকসই ও মান সন্মত না হওয়ায় কৃষকদের কে নিঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের দাবি বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকার মতো বিপর্যয় আসেনি। নদ নদীতে পানি বাড়ার চাপে বাঁধ ভেঙে ফসল ডুবির শঙ্কা রয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে নলুয়ার হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু কিছু জমিতে আধাপাকা ধান কাটছেন কৃষক। কেউ বা আবার বেড়িবাঁধে ঘুরে দেখছেন। আবার ঝুঁকিপুর্ন অংশে কাজ চলছে।
ভূরাখালি সমাজসেবা নামে সামাজিক সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তরুণ সমাজকর্মী মতিউর রহমান জানান, তাদের সংগঠনের ৩০ জন সদস্য গ্রামবাসীর সাথে স্বেচ্ছাশ্রমে বেড়িবাঁধে মাটি ফেলার কাজ করেন সারারাত। পানির চাপে বেড়িবাঁধগুলো ঝুঁকিতে ছিল। স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করায় বাঁধ রক্ষা হয়েছে। এখনো বেঁচে আছে কৃষকের স্বপ্ন।
পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, পাটলী ইউনিয়নের কইলার হাওর, আধাকান্দি হাওর,বিলচর হাওর,ঘাইটার হাওর, সাতবনদের হাওরে কৃষকরা সারারাত স্বেচ্ছায় কাজ করে হাওর রক্ষার সংগ্রাম করেছেন। তার অভিযোগ অপ্রয়োজনীয় অনেক বেড়িবাঁধ হলেও পাটলী ইউনিয়নের ফসল রক্ষায় কোন বেড়িবাঁধ না থাকা দুঃখজনক।
রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছদরুল ইসলাম বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পানি বাড়লে বিপদ হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এর উপ সহকারী প্রকৌশলী হাসান গাজী বলেন জগন্নাথপুর উপজেলায় এবার ২৮ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসির) মাধ্যমে সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরমধ্যে কয়েকটি বেড়িবাঁধ অতিরিক্ত পানির চাপে ঝুঁকিতে পড়ে। পিআইসি কমিটির সাথে এলাকার লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে বাঁধ রক্ষায় ভূমিকা রেখেছেন। রাতের আধাঁরে তেমন কাজ করা যায়নি। আজও কাজ চলছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের সাথে আমিও সারারাত হাওরে ছিলাম। তাদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহনে আমি অভিভূত। তিনি বলেন সবাই মিলে আমরা চেষ্টা করছি ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ রক্ষা করে ফসল উত্তোলনের।
More News Of This Category