বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
সমস্ত প্রশংসা সেই মহান আল্লাহ পাকের ইজ্জতি দরবারে যিনি আমাদেরকে আ’শরাফুল মাখলুকাতের শ্রেষ্ঠ মাখলুকাত হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরন করেছেন।
যে সমস্ত বরকতময় রজনীতে আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের প্রতি করুণার দৃষ্টি দান করে থাকেন, শবে বরাত তারই অন্যতম একটি শুভ রজনী। রাতটি হলো আরবী শাবান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সলফে সালেহীন এবং বিজ্ঞ ওলামায়েকেরামগন এ রাতটিকে অত্যান্ত গুরুত্ব সহকারে পালন করেছেন। অনুরূপভাবে যুগে যুগে মুসলমানগণ এরই ধারাবাহিকতায় এ রাতটি পালন করে আসছেন। ইমাম রাফে’ হযরত আনাস (রা:)-র উক্তি লিখেছেন, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এ মাসের নাম ‘শা’বান’ এ জন্য রাখা হয়েছে যে, এ মাসে রোযা পালনকারীর সাওয়াব, মঙ্গল ও সৌন্দর্য শাখা-প্রশাখার ন্যায় বিস্তার লাভ করে, যাতে রোযাদার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।
আরবী ১২ মাসের অষ্টম মাস শাবান। শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রটি কোরআনের ভাষায়- (লাইলাতুম মুবারাকা) বা বরকতময় রজনী, আর হাদীসের ভাষায়- (লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান) বা শাবানের মধ্য রজনী। তাফসীরের ভাষায় -(লাইলাতুছ্ ছাক) বা সনদপ্রাপ্তির রাত্রি- (লাইলাতুন নাজাহ) তথা মুক্তি রজনী। আর আমাদের উপমহাদেশে যাকে শবে বরাত বলে আমরা জানি তা ফারসী ভাষা থেকে উদ্ভূত। শব বা (রাত) ও বরাত বা (ভাগ্য) পবিত্রতা, নাজাত, মুক্তি, ত্রাণ ইত্যাদি। এছাড়াও এর আরো অনেক নাম রয়েছে। যেমন- পাপ মুক্তির রজনী, বন্টনের রজনী, গুণাহের কাফ্ফারার রাত, দোয়া কবুলের রাত, ফেরেস্তাদের ঈদের রাত, প্রতিদানের রাত, সুপারিশের রাত, ক্ষমার রাত, সম্মানের রাত, পূণ্যের পাল্লা ভারি হওয়ার রাত, দোযখ থেকে মুক্তির রাত, ইত্যাদি।
পবিত্র কুরআন ও নির্ভরযোগ্য মুফাসসিরগণের দৃষ্টিতে পবিত্র শবে বরাত :-
মধ্য শাবানের রাত্রি যা কোরআনের পরিভাষায় লাইলাতুম মুবারাকা নামে পরিচিত। এ রাতটির মর্যাদা, অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব কোরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
ইদানিং একটি ভ্রান্ত-মতবাদী দল বিভিন্ন মিডিয়ায় তাদের বক্তব্য, আলোচনায় এবং লেখনীতে সর্বদা এ কথা বলে বেড়াচ্ছে যে, লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাতের নির্ভরযোগ্য কোন দলীল কোরআন ও হাদীস শরীফে নেই। যা আছে তাও মাওজু তথা বানোয়াট বা জাল কিংবা সাংঘাতিক পর্যায়ের দুর্বল। অথচ, দেখুন পবিত্র কোরআনে কারীম ও নির্ভরযোগ্য তাফসিরের কিতাবের ভাষ্য-
সূরা দুখানের ১-৪ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-
অর্থাৎ, হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ।
এ আয়াতের তাফসীরে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) ও হযরত কাতাদা (রা.) সহ অধিক সংখ্যক মুফাসসির বলেন- ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ ‘ দারা লাইলাতুল কদর বুঝানো হয়েছে। কিন্তু হযরত ইকরামা (রা.) সহ অপর মুফাসসিরগন ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ বলতে নিসফে শা’বানের রাত অর্থাৎ শবে বরাত বলে মনে করেন। উক্ত আয়াতে বর্নিত ‘বরকতময় রাত ‘ শবে কদর না শবে বরাত এ বিষয়ে মতানৈক্য থাকেলও সকল মুফাসসিরগন শবে বরাতের মর্যাদার কথা স্বীকার করেছেন।
শবে বরাত সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য নির্ভরযোগ্য কয়েকজন মুফাসসিরগণের মতামত তুলে ধরছি :-
১. তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
অর্থাৎ,নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।
২. তাফসীরে কুরতুবী পৃষ্ঠা-১২৬, খন্ড ১৬ এ বর্ণিত আছে –
ইমাম কুরতুবী (র:) বলেন, এ রাতের ৪ টি নাম আছে-
ক. লাইলাতুম মুবারাকাহ,
খ.লাইলাতুল বারাআত,
গ. লাইলাতুছ্ ছাক,
ঘ. লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান।
৩. তাফসীরে বাগাভী পৃষ্ঠা-২২৮, খন্ড ৭ -এ বর্ণিত আছে –
অর্থাৎ,নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন শবে বরাতের রাতে এবং তা সংশ্লিষ্ঠ দায়িত্ববান ফেরেস্তাদের কাছে ন্যাস্ত করেন শবে ক্বদরের রাতে।
তাফসিরে রুহুল বয়ান ৩য় খন্ড ৫৯৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
আল্লাহ পাক উক্ত রুজি রোজগার ও রিজিক বন্টনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার হযরত মিকাঈল (আঃ) এর উপর, কার্যসমূহ ও বন্দেগীর দায়িত্ব ভার ১ম আসমানের ফেরেস্তা হযরত ইসরাইল (আঃ) এর উপর, বিপদাপদ ও দুঃখ দুর্দশায় দূরীকরনের দায়িত্বভার হযরত আযরাইল (আঃ) এর উপর অর্পণ করেন।
শবে বরাত যে মুসলিম উম্মার জন্য একটি বরকতময় ও ফজিলত পূর্ণ রাত্রি এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। সমস্ত মুফাসসিরীন ও মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ রাতকে একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন।
গাউসূল আজম বড় পীর শেখ সৈয়্যদ আবূ মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী (র:) তদ্বীয় কিতাব “গুনিয়াতুত্ত্বালেবীন” এর ১ম খন্ডে-এ ৬৮৪ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন-
অর্থাৎ:- আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- হা-মী-ম প্রকাশ্য মহাগ্রন্থ আল কোরআনের শপথ- যে কোরআনকে আমি মুবারক (বরকতময়) রাতে নাযিল করেছি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) এর তাফসীর প্রসংগে বলেন- কিয়ামত পর্যন্ত যা হওয়ার আছে- তা আল্লাহ পাক ফয়সালা করে দিয়েছেন। শপথ উজ্জল প্রকাশ্য গ্রন্থ তথা কোরআনের যাকে আমি বরকতময় রাতে অর্থাৎ শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রজনীতে নাযিল করেছি- ঐ ১৫ শাবানের রাতটি হচ্ছে লাইলাতুল বরাআত- এবং অধিকাংশ মোফাসসিরীনে কেরাম এ মত পোষন করেছেন।
হুজুর গাউছে পাক (র:) তদ্বীয় কিতাব “গুনিয়াতুত্ত্বালেবীন” এর ১ম খন্ড-এ ১৮৭ পৃষ্টায় আরো বলেন-
অর্থাৎ :- লাইলাতুল বরাতকে এ কারণে “মুবারক” তথা বরকতময় বলা হয়েছে- যেহেতু এ পবিত্র রাতে দুনিয়াবাসীদের জন্য অফুরন্ত রহমত, বরকত ও কল্যাণ নাযিল করা হয়ে থাকে। অধিকন্তু পৃথিবীবাসী মুসলিমদেরকে এ রাতে ক্ষমা করা হয়ে থাকে।
মালেকী মাযহাবের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী (র:) সূরা দুখানের তাফসীরে তদ্বীয় তাফসীরে ছাভী-র ৪র্থ খন্ডের ৪০ পৃষ্টায় উল্লেখ করেন-
অর্থাৎ :- ঐ বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শা’বানের রাত্রি। মোফাসসিরীনে কেরামের অন্যতম মোফাসসির, বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রা:) ও অন্যান্য তাফসীরকারকদের একদলের অভিমত। তারা এর কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছেন। শা’বানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত্রির চারটি নামে নামকরণ করেছেন। যেমন-
১। লাইলাতুম মুবারাকাহ- বরকতময় রজনী।
২। লাইলাতুল বারাআত- মুক্তি বা নাজাতের রাত্রি।
৩। লাইলাতুর রহমাহ- রহমতের রাত্রি।
৪। লাইলাতুছ ছাক- সনদপ্রাপ্তির রাত্রি ।
হাদীসের আলোকে লাইলাতুল বরাত সমপর্কে হাদীসবেওাদের দলীল :-
পবিত্র শাবান মাস। এ মাসে রোজা পালনের গুরুত্বের উপর বোখারী ও মুসলিম, তিরমিযীসহ অনেক বিশুদ্ধ হাদিসগ্রন্থের বর্ণনায় লক্ষ্য করেছি। অনুরূপভাবে এ মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত তথা শবে বরাত সম্পর্কে ছিহাহ্ ছিত্তাহর উল্লেখযোগ্য কিতাবাদিসহ নানা নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে প্রমাণ রয়েছে। নিম্নে দলীলগুলো তুলে ধরছি।
দলীল নং-০১
হযরত আবূ মূসা আশয়ারী (রা:) রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ পাক রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তার সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (ইবনে মাজাহ শরীফ পৃ. ১০০ হাদীস নং-১৩৮৯, মিশকাত শরীফ-১১৫ পৃষ্ঠা)
এছাড়াও এ হাদীসটি অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছ।
আল্লামা শেখ আবদুল হক মোহাদ্দীসে দেহলভী (র:) এ ধরনের কতিপয় হাদীস শরীফ উল্লেখ পূর্বক তদ্বীয় মা-ছাবাতা বিচ্ছুন্নাহ কিতাবের ৩৫৪ পৃষ্ঠায় মুশাহিন শব্দের ব্যাখ্যায় লিখেন-
হাদীস শরীফে যে “মুশাহিন” শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে- এর অর্থ হলো বেদাতীগণ, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত হতে বহিঃকৃত হয়েছে। এই বেদআত পন্থী ৭২ ফেরকাকে আল্লাহ পাক এ রাত্রিতে মার্জনা করবেন না। অলীকুল সম্রাট গাউসূল আজম বড়পীর শেখ সৈয়্যদ আবূ মুহাম্মদ আবদুল কাদের জিলানী (র:) “গুনিয়াতুত্ত্বালেবীন” নামক কিতাবে শায়েখ আবু নছর সনদ পরস্পরায়, -আমীরুল মোমেনীন মাওলা আলী (রা:) হতে একই ধরনের হাদীস উল্লেখ করে- বর্ণনা করেছেন যার ভাবার্থ প্রায় একই ধরনের।
দলীল নং-০২
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মধ্য শা’বানের রাত্রিতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অত:পর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতা পোষনকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।
(ইমাম বায়হাকী “শুয়াবুল ঈমান” এর হাদীস নং-৩৮৩৩)
এছাড়াও এ হাদীসটি আরো বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, বায়হাকী শরীফে বর্ণিত হাদীসটি অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম ছাড়াও শবে বরাতের বিরুদ্ধবাদী আলেমও সহীহ হাদীস হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
দলীল নং-০৩
মিশকাত শরীফে ১১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-
উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- রহমতে আলম নূরে মুজাচ্ছাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আয়েশা (রা:) কে জিজ্ঞেস করলেন- হে আয়েশা! শা’বান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা ও বুযুর্গী সম্পর্কে তুমি কি জান? তিনি আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাতের কি মর্যাদা রয়েছে? আল্লাহর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বললেন- আগামী এক বছরে কতজন আদম সন্তান ভূমিষ্ট হবে এবং কতজন আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে তা এ রাত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাত্রিতে তাদের আমল মহান আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের রিযিক অবতীর্ণ কিংবা নির্ধারণ করা হয়। অত:পর হযরত আয়েশা (রা:) বললেন, ইয়া রাসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “আল্লাহর রহমত ছাড়া কারো পক্ষে কি জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত ও একান্ত অনুগ্রহ ছাড়া কারো পক্ষে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। এ কথাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন। (ফাজায়েলুল আওকাত এর হাদীস নং ২৬ এ হাদীসটি রয়েছে)
গাউসূল আজম শেখ সৈয়্যদ আবদুল কাদের জিলানী (র:) তদ্বীয় “গুনিয়াতুত ত্বালেবীন” নামক কিতাবে উল্লেখ করেন : হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বলেন- আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমান শা’বানের মধ্যবর্তী রাতে হযরত জিব্রাইল (আ:) আমার নিকট এসে বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ আপনার মাথা মোবারক আকাশের দিকে উত্তোলন করুন- কেননা আজ বরকতের রাত। আমি জিজ্ঞেস করলাম- কেমন বরকত? উত্তরে হযরত জিব্রাইল (আ:) বললেন- এই রাতে আল্লাহ পাক তিনশত রহমতের দরজা খুলে দেন। মুশরিক, যাদুকর, গণক, সর্বদা মদ্য পাণকারী, ব্যভিচারী এবং সুদখোর ব্যতীত সকলকে আল্লাহপাক ক্ষমা করে দিবেন। (গুনিয়াতুত্বালেবিন- ৫২৭ পৃষ্ঠা)
দলীল নং-০৪
সিহাহ্ সিত্তার অন্যতম হাদীসগ্রন্থ জামেউত তিরমিযী শরীফ ১ম খন্ড ৯২ পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায় রয়েছে- (বাবু মা- জা- ফি লাইলাতুন -নিসফী শাবান) সেখানে হযরত উম্মুল মোমেনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন- এক রজনীতে আমি দয়াল নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিছানায় পেলাম না। এই জন্য তাঁর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। তারপর আমি জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে নবীজিকে আকাশের দিকে মাথা উঠানো অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি এ ধারণা করছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার উপর অবিচার করেছেন? হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বললেন; আমি এমন ধারণা করিনি, ভেবেছিলাম আপনি আপনার অন্য কোন বিবির নিকট গমন করেছেন। তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমালেন নিশ্চয় আল্লাহ পাক শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত্রে প্রথম আকাশে তাজাল্লী ফরমান- অত:পর তিনি (আল্লাহ জাল্লাশানুহু) বনী কালব গোত্রের:মেষের পশম সমূহের চেয়েও বেশী লোকের গুনাহ ক্ষমা করেন।” উল্লেখ্য যে, এই বনী কালব এর মেষের সংখ্যা ছিল ৩০,০০০।
এছাড়াও এ হাদীসটি আরো বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
দলীল নং-০৫
সিহাহ্ সিত্তার অন্যতম হাদীসগ্রন্থ ইবনে মাজাহ শরীফের ১০০ পৃ: এবং মিশকাত শরীফের ১১৫ পৃষ্ঠায় আমীরুল মোমেনীন, শেরে খোদা, মুশকিল কোশা হযরত আলী (রা:) হতে মারফু মুত্তাছিল সনদে রেওয়ায়েত করেন- যে, আল্লাহর হাবীব নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন,
যখন শা’বানের ১৫ তারিখের রাত্র আগমন করে তখন তোমরা রাত্র জাগরণ কর এবং মহান আল্লাহ তায়ালার এবাদত বন্দেগী কর ও এর পূর্ববর্তী দিনে (১৫ তারিখে) রোজা পালন কর। কেননা চৌদ্দ তারিখের সূর্য অস্থ যাওয়া তথা ১৫ তারিখের রাত্র আরম্ভ হওয়ায় সাথে সাথে মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে স্বীয় তাজাল্লী প্রকাশ ফরমান। অর্থাৎ দুনিয়া বাসীর প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি দান করতঃ দয়াপূর্ণ কুদরতী আওয়াজে আহ্বান করে থাকেন। আমার বান্দাদের মধ্যে কেউ আজকের এ পবিত্র রাত্রে আমি আল্লাহর দরবারে নিজের কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। রুজি-রিজিক চাওয়ার আছ কি? আমি তোমাদের চাহিদা অনুপাতে রিজিক দানের ফয়সালা করে দিব। কোন বিপদগ্রস্থ লোক বিপদ মুক্তির জন্য প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তোমাদের বিপদ দূরীভূত করে দিব। এমন আরো বিষয়ে কেউ প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তা সবই তোমাদেরকে দান করব।
মহান আল্লাহ তায়ালার এরূপ করুনাপূর্ণ ঘোষনা সুবহে সাদিক পর্যন্ত চলতে থাকে।
(এছাড়াও এ হাদীসটি অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে-)
দলীল নং-০৬
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শা’বানের মধ্যবর্তী রাত তথা শবে বরাত যখন আগমন করে তখন মহান আল্লাহ তায়ালা রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তিনি তার সমস্ত বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা মুসলমান ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষপোষণকারীকে ক্ষমা করেন না। (বায়হাকী ৩য় খন্ড, ৩৭৮ পৃষ্ঠা)
দলীল নং-০৭
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা:) থেকে বণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, শা’বান মাসের মধ্যবর্তী রাতে মহান আল্লাহ রহমতের ভান্ডার নিয়ে তার সকল সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং এ রাতে হিংসুক ও হত্যাকারী ব্যাক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। (মুসনাদে আহমদ ৬ষ্ঠ খন্ড, হাদীস নং-১৬৪২, পৃষ্ঠা-২৩৮)
এছাড়াও হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রঃ) তদ্বীয় কিতাব “মুকাশাফাতুল কুলুব” এর ৬৪০ পৃঃ ইমাম সবুকীর (রঃ) শবে বরাত সমপর্কে উল্লেখ করেন-
উক্ত শবে বরাতের রাত্রে বান্দার সারা বৎসরের গুনাহ মাফের বদলা হয়ে যায়। শুক্রবার রাত্রের ইবাদত সাপ্তাহিক গুনাহ মাফের বদলা এবং শবে ক্বদরের রাত্রের ইবাদত সারা জিন্দেগীর গুনাহ মাফের বদলা হয়ে যায়। এই জন্যই এ রাত্রসমূহে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় জাগ্রত থেকে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে গুনাহ মাফের উছিলা হয়ে যায়। তাই এ রাত্র সমূহকে গুনাহ মাফের উছিলা বলা হয়।
উপরিউক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম শবে বরাত উদযাপন করেন এবং তাঁরই অনুসরণে যুগে যুগে মুসলমানগণ এ রাতকে বরকতময় রজনী হিসেবে পালন করে আসছেন।
শবে বরাতের আমলঃ-
১.শা’বানের ১৫ তারিখ রাতে (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) গোসল করবেন। যদি কোন অসুবিধার কারণে গোসল করতে সক্ষম না হন, তবে শুধু ওযু সহকারে দু’ রাকা‘আত ‘তাহিয়্যাতুল ওযু’ পড়বেন। প্রত্যেক রাকা‘আতে সুরা ফাতেহার পর আয়াতুল কুরসী একবার, সুরা ইখলাস তিন বার পড়বেন। এ নামাজ অতি উত্তম। এ রাতে বিশেষভাবে দু’রাকা‘আত নামাজ পড়া যায়। প্রত্যেক রাকা‘আতে সুরা ফাতেহার পর আয়াতুল কুরসী একবার, সুরা ইখলাস পনের বার করে পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর দুরুদ শরীফ একশ’ বার পড়ে রিযিক (জীবিকা) বৃদ্ধির জন্য দোওয়া করবেন। ইনশা-আল্লাহ, এ নামাজের কারণে রিযিক (জীবিকা) বৃদ্ধি পাবে।
২.শাবানের ১৫ তারিখের রাতে (শবে বরাতে) ৮ রাক‘আত নামায ৪ সালামে পড়বেন। প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ক্বদর একবার করে পড়বেন। আর সূরা ইখলাস পড়বেন ২৫ বার করে। গুনাহ ক্ষমার জন্য এ নামায অতি উত্তম। ইনশা-আল্লাহ এ নামায সম্পন্নকারীকে আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিবেন।
৩.শা’বানের ১৫ তারিখের রাতে আরো ৮ রাক‘আত নফল নামায রয়েছে। দু’সালামে এ নামায পড়তে হয়। প্রত্যেক রাক‘আাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাস দশবার করে পড়বেন। আল্লাহ তা’আলা এ নামায সম্পন্নকারীর জন্য অগণিত ফিরিশতা নিয়োগ করবেন যাঁরা কবরের আযাব থেকে নাজাত ও বেহেশতে প্রবেশের সু-সংবাদ দেন।
৪.শাবানের ১৫ তারিখের রাতে সাত সালাম সহকারে (অর্থাৎ প্রতি নিয়্যতে দু’ রাক‘আত করে) ১৪ রাক‘আত নফল নামায পার্থিব ও ধর্মীয় উদ্দেশ্যাদি হাসিলের জন্য অতি উত্তম। তা পড়ার নিয়ম হচ্ছে প্রত্যেক রাক‘আতে সূরা ফাতেহার পর সূরা কাফিরূন একবার, সূরা ইখলাস একবার পড়বেন। তার সাথে সূরা ফালাক্ব ও না-স্ একবার পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর আয়াতুল কুরসী একবার পড়বেন। তারপর সূরা তাওবার শেষ আয়াতগুলো “লাক্বাদ জা-আকুম রাসূ-লুম্” থেকে ‘আযী-ম’ পর্যন্ত একবার পড়বেন।
৫.শাবানের ১৫ তারিখের রাতে আরো ৮ রাক‘আত নফল নামায দু’সালাম সহকারে পড়া যায়। প্রথম দু’ রাক‘আতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ‘আলাম নাশরাহ্ লাকা’ দশবার, তৃতীয় রাক’আতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ক্বদর দশবার এবং চতুর্থ রাক‘আতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাস দশবার পড়বেন। সালাম ফেরানোর পর সত্তর বার ইস্তিগফার ও সত্তর বার দরূদ শরীফ পড়বেন। ইনশ-আল্লাহ্ এ নামায সম্পন্নকারীর সগীরাহ ও কবীরা গুনাহ আল্লাহ পাক ক্ষমা করে তাকে পাপমুক্ত করবেন।
৬.শবে বরাতে ছয় নিয়্যতে বার রাক‘আত নফল নামায পড়লেও প্রচুর সাওয়াব পাওয়া যায়। প্রথম রাক‘আতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ‘ক্বদর’ ও দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা ফাতেহার পর তিনবার সূরা ইখলাস পড়বেন। সূরা ক্বদর মুখস্ত না থাকলে উভয় রাক‘আতে সূরা ফাতেহার পর তিনবার করে সূরা ইখলাস পড়বেন।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শা’বান মাসে কেউ তিন হাজার বার দরূদ শরীফ পড়ে আমার নিকট পেশ করলে হাশরের দিনে তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য অবধারিত হয়ে যায়।
৭.কুরআন শরীফ তিলাওয়াতঃ-
শবে বরাতে সূরা ইয়াসিন তিনবার পড়লে এ উপকারাদি রয়েছে- রিযক্ব বা জীবিকা বৃদ্ধি, দীর্ঘায়ু এবং আকষ্মিক বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকা যায় ইত্যাদি।
৮.শবে বরাতে সূরা দুখান তিনবার তিলাওয়াত করা অতি উত্তম। ইনশা-আল্লাহ তা’আলা বিশ্ব প্রতিপালক তিলাওয়াতকারীর সত্তরটি দুনিয়ার প্রয়োজন এবং সত্তরটি আখিরাতের প্রয়োজন এর বরকতে পূরণ করবেন।
সূরা আর-রাহমান, সূরা ওয়াকেয়া, সূরা মূলক ইত্যাদি তেলাওয়াত করতে পারেন। এতে অনেক ফায়দা অর্জন হবে।
৯.নফল রোযাঃ-
শা’বান মাসের ১৫ তারিখের রোযার অনেক ফযীলত রয়েছে। যে কেউ এ রোযা রাখবে মহান আল্লাহ তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
১০.কবর যিয়ারতঃ-
এ রাত্রে আপনজন যারা কবরে তাদের কবর যিয়ারত করবেন। স্ব স্ব এলাকার আওলিয়ায়ে কেরাম, বুজুর্গানে দ্বীনদের মাজার যিয়ারত করা অতি উত্তম। এতে ফয়েজ ও বরকত হাসেল হয়। তবে হ্যাঁ কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সারা রাত্র ব্যয় করে দেওয়াটা বোকামী। যেহেতু সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে আয়ত্বের ভিতরে নিকটতম মাজার শরীফ ও কবর জিয়ারত করলে আদায় হয়ে যায়। কেনান, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) শা’বানের ১৫ তারিখের রাতে জান্নাতুল বাকীতে মোনাজাতরত অবস্থায় পেয়েছেন। (“জামে তিরমিজি” ১ম খন্ড ৯২ পৃষ্ঠা, “মুসনাদে আহমদ” ১৮তম খন্ড, পৃ.-১১৪, হাদীস নং-২৫৯৬।)
১১.শবে বরাতের রাতে হালুয়া-রুটি বা শিন্নি বিতরণ :-
শবে বরাতে হালুয়া-রুটি ও অন্যান্য উন্নত খাবার তৈরী করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ। কারণ ইহা এক ধরণের উন্নত হালাল খাবার। আর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিষ্টি অধিক ভালবাসতেন। (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮১৭ পৃষ্ঠা সহ আরো বিভিন্ন পৃষ্ঠায় ১১টি হাদীস রয়েছে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:) থেকে বর্ণিত, মিশকাত শরীফ ৩৬৪পৃষ্ঠা )
এছাড়া তিরমিযী শরীফে উল্লেখ আছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- “হে লোক সকল, তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে অন্য দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করো এবং লোকজন যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন নামাজে দন্ডায়মান হও, তবেই তো শান্তিতে বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে।
এতে বুঝা গেল যে, লোকদের খাওয়ানো ও বেহেস্ত লাভের একটি উছিলা।
পবিত্র শবে বরাতে উপরোক্ত হাদীসের উপর আমল করার সুযোগ হয়।
প্রথমত:
মুসলমানগণ নামাজে যাবে একে অপরের সাথে সাক্ষাত হবে এবং একে অপরের সাথে সালাম আদান-প্রদান করবে। আর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সালাম আদান-প্রদান একটি উত্তম আমল।
দ্বিতীয়ত: শবে বরাতে ভাল খাবার বন্টনের মাধ্যমে মানুষকে খাবার খাওয়ানো হলো। পাশাপাশি গরিব-মিসকিনরা একদিন ভাল খাবার খাওয়ার সুযোগ পেল।
তৃতীয়ত: আত্বীয়-স্বজন একে-অপরের বাসা/বাড়িতে খাবার বিতরণের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক আরো মজবুত হবে।
সুতরাং হালুয়া রুটিসহ উন্নত খাবার পাকানো ও লোকজনকে খাওয়ানো কোন অবস্থায় নাজায়েজ নয়।
এ রাতে আমাদের করণীয়-
ফরজ নামাজ সমূহ জামায়াত সহকারে আদায় করা।
কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর বেশী বেশী দরুদ শরীফ পড়া।
বেশী বেশী নফল নামাজ আদায় করা।
সালাতুত তাসবীহ ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা।
মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও আওলিয়ায়ে কেরামসহ নিকটবর্তী কবর জিয়ারত করা।
তাওবা করা, জিকির ও তাসবীহ-তাহলীল পড়া।
পবিত্র মিলাদ শরীফ ও তাজিমসহকারে ক্বিয়ামের মজলিস কায়েম করা সর্বোপরি -মুসলিম মিল্লাত, দেশ, আত্মীয়-স্বজন, মা-বাবা ও নিজেদের জন্য দোয়া করা।
পরিশেষে বলতে পারি যে, তাফসীর, হাদীস ও ফিকহের অসংখ্য গ্রন্থে শবে বরাতের এত ফযিলত থাকার পরও যারা এর অস্তিত্বকে স্বীকার করবে না, এ রকম লোকদের ব্যাপারেই মহান আল্লাহ পাক সূরায়ে আরাফের ১৭৯ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেন-
অর্থাৎ : নিশ্চয়ই আমি জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি বহু জিন ও মানবকে, তারা এমন সব হৃদয় ধারণ করে, যে গুলোর মধ্যে বোধ-শক্তি নেই, তাদের এমন সব চক্ষু রয়েছে, যে গুলো দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের এমন সব কান রয়েছে, যে গুলো দ্বারা তারা শুনে না, তারা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বরং তা হতেও অধম, তারাই আলস্যের মধ্যে পড়ে রয়েছে।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ইরশাদ করেন- আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। একদল ছাড়া বাকী সবাই জাহান্নামী। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাযাত প্রাপ্ত একদল কোনটি? উত্তরে নবীজি বললেন “যারা আমি এবং আমার সাহাবায়ে কেরামের পথে আছে তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল। এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (র:) বলেন- সে দলটি হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত। তাইতো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারীদের কাছে পবিত্র শবে বরাতের গুরুত্ব আছে, যেহেতু প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবে বরাতের ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন, সাহাবায়ে কেরাম প্রতিযোগিতা করে পালন করেছেন, আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসারী সে পথে ও মতে আছি বিধায় আমরাও পালন করে চলছি এবং কিয়ামত পর্যন্ত হক পথের অনুসারিগণ পালন করবে। আর যারা ৭২ ফের্কা জাহান্নামী তাদের কাছে অন্য অনেক বিষয়ের মত এই শবে বরাতেরও কোন গুরুত্ব থাকবে না এটাই স্বাভাবিক, তারা এর বিরোধিতা করবে। আবার ৭২ ফের্কার একদল আছে পবিত্র শবে বরাত আসলে মসজিদে তালা ঝুলায়। অথচ আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফের সূরায়ে বাকারার ১১৪ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেন-
অর্থাৎ,এবং তার চেয়ে অধিকতর যালিম কে, যে আল্লাহর মসজিদগুলোতে বাধা দেয় সেগুলোতে আল্লাহর নামের চর্চা হওয়া থেকে, আর সেগুলোর ধ্বংস সাধনে প্রয়াসী হয়? তাদের জন্য ভয়-বিহ্বল না হয়ে মসজিদে প্রবেশ করা সঙ্গত ছিলো না, তাদের জন্য রয়েছে পৃথিবীতে লাঞ্ছনা, রয়েছে পরকালে মহাশাস্তি।
তাই আসুন, ফযিলতের এই রাতে আমরা সকলেই ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করি, আল্লাহর দরবারে কৃত গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করি, নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্ঠি অর্জন করি।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে সহীহ বুঝ ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন!
সম্পাদনায়:-
মোঃ নুরুল আমিন (রুবেল)