,
শিরোনাম
জগন্নাথপুরে জাতীয় ইমাম সম্মেলন সম্পন্ন হযরত মাওলানা মরহুম এমদাদুর রহমান (রঃ) এর ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে মীলাদ ও দোআ মাহফিল এবং অসহায় গরীবদের মাঝে কাপড়  বিতরণ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ২০২৩ শিক্ষা বর্ষের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ‌্যে পুরষ্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জগন্নাথপুরে মামলা দায়ের বাতিল হতে পারে ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি ইন্টারনেট শাটডাউন: তদন্তে বেরিয়ে এলো যাদের নাম শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন ড. ইউনূস আমার মায়ের পদত্যাগের বিষয়ে দেয়া বিবৃতি পুরোপুরি মিথ্যা: জয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ উপদেষ্টা পরিষদের ৮ সিদ্ধান্ত

জীবনানন্দ দাশ: তিন কুড়ি বছর পরে

আলমগীর শাহরিয়ার:

১৯৩০। জীবনানন্দের বয়স তখন ৩১ বছর। বেকার জীবনানন্দ। চাকুরি খুঁজছেন। ছোট ভাই অশোকানন্দের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসায় নামলেন। ব্যবসা (ছাতার ডাটের জন্য বেত আমদানি) টেকেনি। কিছুদিন এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন এক ইনসিওরেন্স কোম্পানিতে। না, কোথাও সফলতার দেখা নেই।

১৯৪৩। জীবনানন্দের বয়স ৪৪ বছর। এ বছরই বুদ্ধদেব বসু ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের সমালোচনায় লিখছেন, “আধুনিক বাংলা কাব্যের অনেক আলোচনা আমার চোখে পড়েছে যাতে জীবনানন্দের উল্লেখমাত্র নেই। অথচ তাঁকে বাদ দিয়ে ত্রিশ পরবর্তী বাংলা কাব্যের কোন আলোচনা হতেই পারে না। কেননা এই সময়কার তিনি একজন প্রধান কবিকর্মী, আমাদের পরিপূর্ণ অভিনিবেশ তাঁর প্রাপ্য।”

না, জীবনানন্দ দাশ জীবদ্দশায় তার প্রাপ্য পাননি। সমকালে উপেক্ষিত থেকে গেছেন। অবহেলিত হয়েছেন। তবে তিনি নিশ্চিন্তে হেঁটেছেন মহাকালে।

লিখছেন,
‘জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা অন্য সবাই বহন করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নতুন শতাব্দীতে নক্ষত্রের নিচে।’

আসলেই কি তাই? না, জীবনানন্দ গভীরভাবেই সচল ছিলেন। তবে একান্তই একলা, নির্ভেজাল নির্জনে। সমকাল বুঝে উঠেনি তাঁরে। অপার সৃষ্টির বিত্ত বৈভবে সমৃদ্ধ স্রষ্টা সকল সমাজে, সকল কালেই নিঃসঙ্গ থাকেন।

১৯৪৯। বয়স ৫০। জীবনানন্দের বেকার জীবন অব্যাহত। ভুল বললাম। একটানা বেকারত্ব নয়। বিরতি দিয়ে। ইতোমধ্যে ধানসিঁড়ি নদীর দেশ বরিশাল ছেড়ে পাকাপাকিভাবে পাড়ি দিয়েছেন জীবনানন্দ কলকাতায়। জীবনের এক দীর্ঘ সময় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছেন। তবে বেকার থেকেছেন প্রায় ১০ বছর। অভাব, দারিদ্র্য, দুঃখ পিছু ছাড়েনি। নিশ্চিন্তে লিখতে চেয়েছিলেন। পারেন নি। নির্জনতম, লাজুক এ কবি দুর্দিনে বন্ধুদের কাছে ধার চেয়েছেন। কুণ্ঠাবোধ করেন নি! জীবনে স্থিতি চেয়েছেন। চেয়েছেন এক দণ্ড সৃষ্টির অবসর। পাননি। জীবন কখনো খুব নির্মম। সহজে কাউকে করুণা করে না। বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে এক যুগ নিশ্চিন্তে চাকরি ছাড়া বাকি সময় বেকারত্ব বা বেকারত্বের সম্ভাবনা তাঁকে তাড়া করেছে। শিক্ষকতা পেশা তাঁকে সচ্ছলতা দেয়নি (আহা! ইংরেজির এ শিক্ষক এ যুগের দেশি-বিদেশি কোচিং ব্যবসার রোজগারের এলাহি কাণ্ড কারখানার খবর যদি জানতেন)।

১৯৫৪। কবির বয়স ৫৫। বরিষা নামক একটি কলেজে পড়াতেন। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে চাকরিটা চলে যায়। কবি ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। ১৪ অক্টোবর। সান্ধ্য ভ্রমণে বেরিয়েছেন। হাঁটছেন কলকাতা শহরের রাসবিহারি এভিনিউ ধরে। দেশপ্রিয় পার্কের কাছে রাস্তা পার হতে গিয়ে ছুটন্ত ট্রামের সঙ্গে জীবন সাঙ্গ করার আয়োজন হয় জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে। কবির আত্মজৈবনিক আলোচনায় এ এক রহস্যের নাম। আজো যা অনুদঘাটিত। নয়দিন অসম এক জীবনযুদ্ধে লড়ে হাসপাতালে মৃত্যুর কাছে সমর্পণ হয় জীবন। কলকাতার পণ্ডিত শম্ভুনাথ হাসপাতালে জীবনানন্দ যে রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তখন তাঁর বয়স ৫৫ বছর ৮ মাস ৪ দিন। আর এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে তাঁর শারীরিক উপস্থিতির দৈর্ঘ্য কমেছে। কিন্তু মৃত্যু?

ইসাবেলা আলেন্দে বলছেন, ‘মৃত্যু বলে কিছু নেই, মানুষের মৃত্যু ঘটে যখন আমরা তাঁকে ভুলে যাই’। বাঙালির জীবনে জীবনানন্দ তাঁর প্রয়াণের তিন কুড়ি বছর পর আরও উজ্জ্বল, উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছেন। বঙ্গের তরুণদের প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ। সমকালে বৈষয়িক সফলতায় ব্যর্থ ছিলেন জীবনানন্দ। সফল হলে কেমন হতো জীবন- জানিনে। তবে ধানসিঁড়ি সন্ধ্যা, পদ্মা, মেঘনা, মধুমতি, যমুনার তীরে তাঁর মৃত্যুর তিন কুড়ি বছর পরে-এখনতো জীবনানন্দ তুমুল জনপ্রিয় কবি।

কবিতার এক নতুন যুগ প্রবর্তক এ কবি ব্যর্থ ছিলেন সমকালে! ব্যর্থ ছিলেন পণ্ডিত মহলের যথাযথ দৃষ্টি আকর্ষণে (ভাগ্যিস একজন বুদ্ধদেব ছিলেন)। নিজেদের কবিকুল শিরোমণি ভেবে জীবনবাবুকে উপহাস করতে কার্পণ্য করেননি সেকালের অনেকেই। তারা কি জানেন সমকালে ব্যর্থ এ কবি এখন মহাকালের যাত্রী! কালের ধুলোয় মিশে গেছেন উপহাসকারীরা। দেশ-কাল-ভূগোল-ভাষা পেরিয়ে পৃথিবীর কবিতা প্রেমীরা খুঁজে বেড়ান জীবনানন্দকে। জীবনানন্দ পাঠ করে এখনো তরুণেরা কবি হতে চান।

জীবনানন্দ বাঙলায় না জন্মালে কে লিখত, “তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও- আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব; দেখিব কাঁঠালপাতা ঝরিতেছে ভোরের বাতাসে; দেখিব খয়েরি ডানা শালিকের সন্ধ্যায় হিম হয়ে আসে।”

অথবা
“বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে/ চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে ব’সে আছে ভোরের দয়েলপাখি – চারদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ/ জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশ্বত্থের ক’রে আছে চুপ”

     More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা

 

 

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ভোর ৫:০২
  • দুপুর ১১:৪৭
  • বিকাল ৩:৩৬
  • সন্ধ্যা ৫:১৫
  • রাত ৬:৩১
  • ভোর ৬:১৬