দৃক নিউজ২৪ ডেস্ক :- সন্তান যত বড়ই হোক, মায়ের কাছে সে সব সময় সেই ছোট্ট আদরের রয়ে যায়। আশনা হাবিব ভাবনা আজ নামি অভিনেত্রী। কিন্তু মায়ের কাছে সে আজও তার আদরের মেয়ে। রাইজিংবিডির ঈদ আয়োজনে মা রেহানা হাবিবের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম মেয়ে ভাবনার পছন্দ-অপছন্দ এবং ছোটবেলার ঈদ নিয়ে। পাঠক, মায়ের মুখ থেকেই শুনুন মেয়ের ছোটবেলার ঈদ-আনন্দের কথা। আমি ঢাকার মেয়ে। বাবার বাড়ি আজীমপুর। সেখানেই আশনা হাবিব ভাবনার জন্ম। ভাবনা আমার দ্বিতীয় সন্তান। ওর আগে আমার একটি ছেলে আছে। পরিবারে ভাবনা তখন একমাত্র মেয়ে। মেয়েরা সাধারণত একটু বেশি আদুরে হয়। ও এখন যেমন দেখতে, ছোটবেলা প্রায় একইরকম চেহারা ছিল। ওকে সব সময় পরিপাটি করে রাখতাম। তবে জাকজমকপূর্ণ সাজে কখনও সাজাতাম না। এমনকি উৎসবেও না। ঈদের দিন সুন্দর জামাকাপড় পরিয়ে দিতাম। সকালে রেডি হয়ে ও চলে যেত নানুর বাসায়। হাতে ছোট একটা পার্স থাকত। যা সালামি পেত পার্সে রেখে দিত। সব শেষে আমার কাছে পার্সটা দিয়ে দিত। সবার কাছ থেকে সালামি তুলবে এতেই তার আনন্দ। এরপর ওই টাকা কোথায় গেল, কি হলো এ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। ছোট থেকে ও পুডিং খেতে খুব পছন্দ করে। ঈদের দিন যা কিছুই বাড়িতে রান্না হোক না কেন ওর জন্য পুডিং বানাতে হতো। ঈদের দিন সব বাড়িতেই সাধারণত পোলাও রান্না করা হয়। কিন্তু পোলাও তার পছন্দ নয়। শুধু ভাবনার জন্য আমার সাদা ভাত রান্না করতে হতো। গরুর মাংস খেতে পছন্দ করে। তবে সঙ্গে ডাল থাকতে হবে। আর মাছের মধ্যে রূপচাঁদা অথবা চিংড়ি মাছ ভাজি খেতে চাইত। ভাবনা একবার হারিয়ে গিয়েছিল প্রায়! ঈদে আমরা সব সময় কোথাও না কোথাও তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যেতাম। ভাবনা তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। ওর বাবাসহ আমরা ঘুরতে গিয়েছিলাম মিরপুর চিড়িয়াখানায়। ঘুরছি-ফিরছি বেশ ভালোই। অনেক হাঁটার পর ক্লান্তবোধ করছিলাম। একটু বসেছি-সাথে দুই মেয়ে। ওর বাবা ওয়াশ রুমে যাবে, আমাকে বলে গেল আমি যেন মেয়েদের দেখে রাখি। হঠাৎ বাঘ ডেকে উঠল। সব লোকজন ভয় পেয়ে গেছে। ভাবনা আমাকে বলল, মা আমি বাঘটাকে একটু কাছ থেকে দেখে আসি? ‘যাও’ বলতেই ও একাই চলে গেল বাঘের খাচার সামনে। খুব বেশি দূরে নয়, আমি চোখে চোখেই রাখছিলাম। কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে অল্প সময়ের ব্যবধানে ভাবনাকে আর দেখতে পারছিলাম না। মানে চোখের আড়ালে চলে গিয়েছিল। এর মধ্যে ওর আব্বু এসে বলল, ভাবনা কোথায়? আমি বললাম বাঘ দেখতে গেছে। সে এগিয়ে গেল। কিছু সময় পড়ে এসে বলল, ভাবনাকে তো দেখতে পাচ্ছি না। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। ‘ভাবনা ভাবনা’ বলে ডাকছি আর খুঁজছি সবাই মলে। কোথাও ভাবনাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেকক্ষণ পরে ওর আব্বুর ফোনে একটা কল আসে। অথচ ‘হ্যালো’ বলতেই কলটা কেটে গেল। ওর আব্বু কান্না শুরু করল। তার ধারণা ভাবনাকে কেউ ধরে নিয়ে গেছে। আমি তখন বললাম, কান্নাকাটি না করে ওই নম্বরে কল ব্যাক করো। কল ব্যাক করতেই জানা গেল ভাবনা চিড়িয়াখানার ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে চলে গিয়েছিল। ওয়াল ঘেঁষে বসে সে পথ হারিয়ে কাঁদছিল। তিনটি ছেলে ওর কাছে এসে জানতে চেয়েছিল-তুমি কাঁদছ কেন? এক দম্পতি আবার ওই ছেলেগুলোকে ভাবনার সাথে কথা বলতে দেখেছিল। তারাও ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘুরতে এসেছিল। তারা ভাবনাকে উদ্ধার করে। ভাগ্যিস ভাবনা ওর বাবার ফোন নম্বর মুখস্থ বলতে পারত। যে কারণে ওকে আমরা ফিরে পেয়েছিলাম। মেয়েটা এখনো ঠিকমতো একা চলাফেরা করতে পারে না। সেই ছোট থেকে ওর সাথে সব সময় কেউ না কেউ থাকে। আজীমপুরে ঈদ কেন্দ্রিক যে মেলা বসত সেখানেও ওকে হাত ধরে নিয়ে যেতে হতো। ও এখনো বাইরে গেলে আমার মনে হয়- পথ হারিয়ে ফেলেনি তো!