স্টাফ রির্পোটার:-
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতির জীবনের এক কলঙ্কময় দিন। দিবসটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে বাঙালি জাতি পালন করে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী। ১৯৭৫-এর এই দিনটিতেই জাতি হারিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও ইতিহাসের এই মহানায়ককে। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের রাজনৈতিক স্বপ্ন সাধনা ছিল জনগণের নৈতিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তি। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া কোন জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তার ধ্যান-ধারণার মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি, নিম্নবিত্ত মানুষ, কৃষাণ-কৃষাণি এবং শ্রমজীবী আর কল্পনায়, চিন্তায়, রাজনীতিতে, দর্শনে সদা দীপ্তমান ছিল অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও ঐশ্বর্যের চিন্তাভাবনা। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা কর্মক্ষেত্রর সুযোগ সৃষ্টি এবং সম্পদের সুষম বণ্টনের লক্ষে ১৯৭৫ সালের ২৫ মার্চ জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দেন। ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বলেন, ‘আঘাত করতে চাই এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে। নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি আমি। গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। পাঁচ বছরের প্ল্যানে বাংলাদেশের ৬৫ হাজার গ্রামের প্রত্যেকটিতে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। এ কো-অপারেটিভে জমির মালিকের জমি থাকবে। বেকার অথচ কর্মক্ষম প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে কো-অপারেটিভের সদস্য করা হবে। আয়-রোজগারের পয়সা যাবে তাদের হাতে, টেস্ট রিলিফ যাবে তাদের হাতে, ওয়ার্কস প্রোগ্রামযাবে তাদের আওতাধীনে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে টাউটদের বিদায় দেয়া হবে। তানা হলে দেশ বাঁচানো যাবে না। আপনার জমিতে উৎপাদিত বর্ধিত ফসলে আপনিও আগের তুলনায় বেশি ভাগ পাবেন। অংশ যাবে কো-অপারেটিভের হাতে, অংশ যাবে সরকারের হাতেও। থানায় থানায় একটি করে কাউন্সিল হবে। মহকুমা আর থাকবে না। প্রতিটি মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হবে। নতুন জেলায় একটি করে প্রশাসনিক কাউন্সিল থাকবে। এর মধ্যে জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এভাবে বাংলাদেশকে স্বপ্নের বাংলাদেশ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু জাতির শত্রু পাকিস্তানী দালালদের উত্তরসূরীরা ৭৫এ ১৫ই আগষ্ট জাতির জনকসহ সহপরিবারে হত্যা করে জাতিকে কলংকময় করে দেয়। আজ শোকাবহ এই দিনে বিনম্র শ্রদ্ধা নিয়ে জাতি স্বরন করছে এই কৃর্তীমান পুরুষকে।
’জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২ তম শাহাদাত বার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সুনাম গন্জ জেলা প্রশাসন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবন সমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা, সকাল সাড়ে ৯টায় সুনামগঞ্জ কালেক্টরেট চত্বরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ১০টায় জেলা প্রষাসনের আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভা, বাদ জোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খতম, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বিকাল ৫টায় শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রমে আলোচনা সভা ও বিশেষ প্রার্থনা, সুবিধাজনক সময়ে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া, জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের বাস্তবায়নে নিজ নিজ সুবিধাজনক সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, হামদ ও নাত প্রতিযোগিতা, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাহায্যপুষ্ট প্রতিমখানা সমূহে কোরআন খতম, মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য জাতীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্ব স্ব কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
এছাড়াও জেলা তথ্য অফিসারের বাস্তবায়নে সুনামগঞ্জ জেলার সকল উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর উপর ভ্রাম্যমাণ প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী চলমান আছে। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক- রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর আর বেদনাবিধুর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ জাতীয় শোক দিবস পালন করবে।