,

নিশ্চুপ ললিতা মু. জামাল হুসাইন

নিশ্চুপ ললিতা
মু. জামাল হুসাইন

রতিকর্ম অন্তে উষ্ণ প্রস্রবনের পর থিতিয়ে পরা অঙ্গের মতই নেতানো দেহ নিয়ে
বসে পড়ল নিশ্চুপ ললিতা। জ্যৈষ্ঠের ঝিম ধরা শেষ দুপুর। রোদের দিকে থকালে
চুখ জ্বলে যায়। লিলুয়া বাতাসে গাছের পাতা ঝরে পড়ছে অথবা তত্যুজ্জল আলোয়
পুড়ে গেছে। সদ্য ঘঠে যাওয়া ঘটনা মন থেকে সরাতে পারছেনা ললিতা। যখনি
চিন্তা সাগরে ডুব দিতে যায় তখনী মনে পড়ে যায় গ্রামের শেষ মাথায় বসবাস করা
পরাগের স্মৃতির অবগ্রাহন। আজ ললিতার স্বপ্ন ধরা ছোয়ার বাহিরে। ললিতার
বিয়ে হয়েছে এই গ্রামে। বাপের ভিটা ছিল দু গ্রাম পরে। গ্রামের স্কুলে ৫ ক্লাস পড়তে গিয়ে ললিতার সর্বনাশ ঘঠেছিল। সদ্য শৈশব থেকে কৈশরে পা ফেলেছিল। ললিতা জানেনা সেটা তার সর্বনাস না কি জীবনের পরম পাওয়া ছিল । আজ ভরা যৌবনে এসে তার হিসাব চুকাতে হবে কে সেটা জানত। দেখতে দেখতে ললিতার বয়স কুড়ি হয়েছে এক সন্তানের জননীও বটে। আজ ললিতার স্বামী সংসার সবিই আছে নেই শুধু সেই জাম তলার মিষ্টি মধুর কৈশরের চঞ্চলতা। সেই চঞ্চলতা দমকা বাতাসের আঘাতে জীবনের সমস্ত স্বাধ যেন তিতো হয়ে যাচ্ছে। সেই ৫ ক্লাস আর পরাগ দুটুই যেন আজ অবেলায় মনের মধ্যে ঝড় বইয়ে দিচ্ছে। সকালে প্রলয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয় তার মধ্যে কি আঘাত নাই দিল। প্রলয় ললীতার স্বামী। রাগের মাথায় ৩ বছরের শিশুকে না খাইয়ে রান্না ঘরের পাশে বসে কতক্ষন যে কেধেঁছে তা মনে নেই। এভাবে প্রায় ঝগড়া হয় প্রলয়ের সাথে। বাবা প্রলয়ের ঘোপরির ব্যবসা আর বিশ বিঘে জমি দেখে মেয়ের সুখের জন্য পনের বছর বয়সে বিয়ে দেন। বাবা কি একবারও ভেবেছিলেন যে কিসে তার একমাত্র মেয়ে সুখি হবে, যদি ভাবতেন তবে পরাগের হাতে ললিতাকে সপে দিত। স্বামীর ভরন পোষণে কমতি নেই তুবও যেন ললিতা অজানা অভাব অনুভব করে, কিসের সেই অভাব অনেক সাধনা করেও সেটা ললিতা খুজেঁ পায়না। গৃহস্থ ঘরের মেয়ে ললিতা দুরুন্তপনার অন্ত ছিলনা আশ পাশের দশ বাড়ীর লোক তার জ্বালায় অস্থির ছিল, কত কথা, তামাশায়, গল্পে মাতিয়ে রাখত সবাইকে। তবে কেউ কোন দিন বাজে মন্তব্য করতে পরেনি। কিন্তু আজ ললিতা নিশ্চুপ হয়ে একা থাকতে থাকতে জিহ্বা ভারি করে ফেলছে গল্পগুলোও ভুলে গেছে। ললিতার ইচ্ছে ছিল স্বামী সংসার নিয়ে সুখি হতে কিন্তু সেকি প্রকৃত সুখ
খুজেঁ পেয়েছে? সেই ভাবনাই আজ ললিতাকে শোকনা রোগা দেহের অধিকারী করে দিয়েছে। অতৃপ্ত আত্বা যেন বার বার নতুন কিছুর আশাঁ নিয়ে মুক্ত দিগন্তে
বেড়ানোর ইচ্ছে পোষন করে। এসব ভাবতে গেলে ললিতার কাজলের মত কালি পড়া চুখের কোনে জমাট বাধে জলরাশি। কচি মনে স্বপ্ন ছিল সুন্দর একটা সংসারের একটা
মনের মত স্বামীর কিন্তু আজ সবকিছু স্বপ্ন রয়েই গেল। শাশুড়ির ডাকে সব ভাবনার সমাপ্তি ঘটল ললিতার। শাশুড়ি ললিতাকে ভালবাসেন মায়ের মতন। ললিতা এ
সংসারে এসে এক মা পেয়েছে। শাশুড়ি ললিতাকে বললেন সুমাইয়া কাদঁছে খাবারের জন্য। সুমাইয়া ললিতার কন্যা যার দিকে থাকালে ললিতা জীবনের সব দু:খ্য কষ্ট ভুলে যায়। তবুও যখন স্বামীর অবেহেলা আর নিষ্টুর আচরণ দেখতে পায় দুনিয়ার সব সুখ ত্যাগ করে পরপারে যেতে ইচ্ছে করে ললিতার। ললিতা জানতনা পরিপূর্ণ বয়সে পরাগ তার মনের আসনে আবার ফিরে আসবে। সেদিন গ্রামের হাটে পরাগের সাথে দেখা কেমন যেন হয়েগেছে ছেলেটা। মুখে দাড়ি গোফ যেন গোলাপি ঠোট দুখানা ঢেকে রেখেছে। সুন্দর মায়াবী মুখখানা যেন আজ মলিন হয়ে আছে। ললিতার দিকে থাকিয়ে পরাগ কি ভেবেছিল। সেকি বুঝতে পেরেছে ললিতা সুখি নেই। অশান্তির আগুনে পুড়ে পুড়ে নি:শ্বেষ হচ্ছে। প্রলয়ের সাথে বিয়ে হবার পর থেকে জীবনের সমস্ত চাওয়া পাওয়া গুলো একে একে ধ্বংস হয়ে গেছে। পরাগ কি আজো আমার পানে চেয়ে থেকে জাম
তলায় পাতার মোড়ানো ভেপুঁ বাশী বাজায়? নাকি সময়ের স্রোতে সব স্মৃতি মুছে
গেছে। মনে আছে বিয়ের দুমাস পর পরাগ বলে ছিল ললিতা জানি তোমার অমতে বিয়ে হয়েছে যদি কখনো এই অভাগার কথা মনে পরে ডাক দিও তোমার পরাগ তোমারি কাছে চলে আসবে। সেদিন কি কান্না না কেঁদেছিল কিন্ত সেই কান্নার অর্থ বুঝিনি আজ সেই অর্থ খুজঁতে মন চায়। কিন্তু প্রলয় একবারও বুঝতে চায়না ললিতা কি চায়?
স্ত্রী হিসাবে ললিতার কি ভরণ পোষনই যথেষ্ট নাকি ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য।
ললিতা গরিব ঘরের মেয়ে হতে পারে কিন্তু এখন তো ধনীর বউ। আজ ললিতা ভাবে
পরাগের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকবে না প্রলয়ের কাছ থেকে। নিজেকে কারো কাছে
উপস্থাপন করার মত যোগ্যতা নেই এক দিকে অবহেলা অন্য দিকে বিশ্বাসঘাতকতা।
আলো আঁধারের এই পৃথিবীতে সবি যেন আঁধারে ডুবে আছে। না পারছে কিছু বলতে না পারছে কিছু সইতে। ললিতা যখন স্বামীর মুখ দেখে তখন তার ভিতরে থাকা মনুষত্বটা বলে এই তোমার স্বামী তোমার পরম আত্মার আত্মীয়। যখন সেই মুখে হিংস্রতার, অবজ্ঞার চাপ দেখে তখন মনে হয় মনুষত্বটাকে গলা টিপে হত্যা করে সুখে সন্ধানে অজানা পথে পাড়ি জমাই। সব কিছু ছেড়ে পরাগের কাছে আমার আকুতি,
আমার চাওয়া সব মিটিয়ে নেই। কিন্তু সুমাইয়ার কি হবে? ওর তো কোন অপরাধ নেই ওকে শাস্তি দেওয়াটা কতটা ঠিক হবে তা বুঝতে পারে না। সেদিন যে পরাগ বলেছিল
ললিতা তুমি সুখি নেই আমি জানি আজো আমি তোমার অপেক্ষা করি তার উত্তরটা বা
কি দিব। প্রলয় যে বলেছিল তর মত মেয়ে বাজারে আলু পটলের মত পাওায়া যায়
সেটাই বা কি করে সইব। যাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই সে যদি ছেড়ে যেতে চায়
তাহলে কি করা উচিত? ললিতার মাঝে মাঝে মনে হয় কেন যে এই পৃথিবীতে জন্মে
ছিলাম? এত যন্ত্রনা নিয়ে কি করেই বা বেঁচে থাকি? আশাঁহীন ভবিস্যৎ, গন্তব্যহীন পথচলা নিজেকে বড্ড পিড়া দেয়। ললিতা সন্ধা তারার দিকে থাকিয়ে আছে। প্রলয় কিছুক্ষন পর ঘরে ফিরবে শুরু হবে রাগারাগি আর অকথ্য গালাগালি উল্টো কিছু বলতে গেলেই মার। কেমন করে প্রলয়কে বুঝাবে এসব ভাল লাগেনা। যদিও প্রলয় কোনদিন ললিতাকে সুখ দেয়নি তার পরেও সুখ দেওয়ার চিন্তা করে আসছে সে। কিন্ত পাষান হৃদয় গলাতে পারেনি। চিন্তায় চিন্তায় লাউয়ের ডগার মত দেহ খানি আজ শুকিয়ে গেছে। সেদিন বাবা বলেছিল কিরে মা তুইত শুকিয়ে গেছিস খাওয়া দাওয়া করিস না নাকি? ললিতা মনে মনে বলেছিল যে ঘরে বিয়ে দিয়েছ সে ঘরে খাবার আছে বাবা সুখ নেই নেই আত্বার খোরাক। বাবাকে বুঝাতে পারেনি সেদিন শুধু দেহের খাবারে স্বাস্থ্য ঠিক থাকেনা মনের খাবারের ও প্রয়োজন
হয়। পৃথিবীতে এমন কতেক মানুষ আছে যারা বাহির দেখে বলতে পারেনা কে সুখি আর কে অসুখি। এসব মানুষেরা হয়ত জীবনটাকে উপভোগ করতে পেরেছে স্বার্থক করতে পারেনি। শুধু যে রাজকীয় জীবনযাপন মানুষকে প্রকৃত সুখি করতে পারে না ললিতা আজ কুড়িতে এসে তা হারে হারে টের পাচ্ছে। পরাগকে ইদানিং খুব বেশী মনে পড়ছে ললিতার। উদাসীন মনে নানা প্রশ্ন নানা কথা সবি যেন চাদেঁর আলোয় নদীর ঢেউয়ের সাথে এপার থেকে ওপারে আছরে পড়ছে। জীবন নামক গল্পের পৃষ্ঠায় আবেগ অনুভতির টাই কতটুকু হয় তা জানা নেই ললিতার। তবুও আবেগ অনুভূতি নিয়ে জীবনের গল্পকে এগিয়ে নিতে চান অনেকেই। সেই মানুষগুলির মত ললিতা এগিয়ে যেতে পারেনা সংসার নামক নরকটা বার বার পিছু টেনে রাখে। ললিতা যদি স্বামীর সোহাগ পেত ভালবাসা পেত তবে হয়ত এত ভাবার প্রয়োজন পড়ত না। পরাগটিা স্রোতের মত যেভাবে জীবনে এসেছিল ঠিক স্রোতের মতই ভেসে যেত। ললিতা অনেক দেখেছে। গ্রামের মতলিব চাচার মেয়ে আমিনা দুইবার গলায় ফাঁশ দিতে চেয়েছিল মাহতাবের জন্য। যখন কোন উপায় না পেয়ে আমিনা বিয়ে করেছিল ঠিক কিছুদিন পর অমনিতেই
স্বামীকে নিয়ে দিব্যি সুখে দিন কাটাচ্ছে  বেছারা মাহতাব আজো আমিনার পথ
ছেয়ে বিয়ে পর্যন্ত করেনি। ললিতা ভাবে কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারেনা। আমি
যদি স্বামীর সোহাগ পেতাম তবে কি পরাগের কথা ভাবতে পারতাম? সে প্রশ্নের
উত্তরও খুঁজে  পায়না। এমন সময়ে ভাবনা গুলোর উদয় হয় যেন প্রলবনের মতই
জীবনটাকে এলোমেলো করে দেয়। নিজের কথা, নিজের কষ্ট, নিজের চাওয়াটা কাউকে
বলতে পারেনা। পারেনা নিজের অধিকারটুকু ভোগ করতে। অথচ চিন্তায় চেতনায় ভাবনাগুলো পিড়া দিতে দিতে জীবনটাকে অন্তিম প্রান্তে পৌছে দিয়েছে। ললিতা আলা জ্বিহ্বা আজ ভারি হয়ে গেছে কাউকে কিছু বলে না কারো সাথে মিশেও না যেন নিশ্চুপতা ঘিরে নিয়েছে। কিছু সময় ললিতা ভাবে চিৎকার করে জানিয়ে দিতে এই পৃথিবীর মানুষকে একজন গ্রামের মেয়ে তার স্বামীর ভালবাসা না পেলে যথাযত
মর্যাদা না পেলে বাকরুদ্ধভাবে নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দেয় নয়ত সমাজটাকে দিক্ষার জানিয়ে কলংকিত অধ্যায়ের পৃষ্টা তৈরী করতে শুরু করে।

     More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা

 

 

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ভোর ৪:২৮
  • দুপুর ১২:০০
  • বিকাল ৪:২৬
  • সন্ধ্যা ৬:১৬
  • রাত ৭:৩১
  • ভোর ৫:৪১