চট্টগ্রাম, ২০ জুলাই ২০১৭ (সিটিজি টাইমস): যুগের চাহিদা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে তাল মেলাতে বাংলাদেশ এবার ল্যান্ড পোর্ট যুগে প্রবেশ করছে। উল্লেখ্য, যে বন্দরের জায়গা ও অবকাঠামো সরকার নির্মাণ করে দেয় এবং পরিচালনা করে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান সেসব বন্দরকে ল্যান্ড লর্ড পোর্ট বলা হয়। বন্দরের পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য সব ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, পরিচালনা ও শ্রমিকও থাকবে যারা পরিচালনার দায়িত্বে তাদের। আর সরকার শুধু তা মনিটরিং করে।
জানা গেছে, ল্যান্ড লর্ড বন্দরের আওতায় যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন বে টার্মিনাল ও মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর। বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে বর্তমানে প্রায় পাঁচ ধরনের (পাবলিক সার্ভিস পোর্ট, টুল পোর্ট, ল্যান্ড লর্ড পোর্ট, করপোরেট পোর্ট ও প্রাইভেট পোর্ট) বন্দর রয়েছে। চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর পাবলিক সার্ভিস, টুল পোর্ট ও ল্যান্ড লর্ড বন্দরের মিশ্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে পরিচালিত হলেও দেশের আগামী বন্দর হতে যাচ্ছে ল্যান্ড লর্ডের আদলে। আর তা হলে ব্যবসা বাণিজ্যে গতি আসবে বলে বন্দর ব্যবহারকারীদের ধারণা।
বন্দর ব্যবস্থাপনায় নতুন কাঠামো আসছে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, ‘বে টার্মিনাল ও মহেশখালীর মাতারবাড়িকে আমরা ল্যান্ড লর্ড বন্দরের আওতায় গড়ে তুলবো।’
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের আওতায় হালিশহরের ইপিজেডের পেছন থেকে দক্ষিণ কাট্টলী রাসমণিঘাট পর্যন্ত সাগরের তীরে নতুন নির্মাণ হতে যাওয়া বে টার্মিনালও ল্যান্ড লর্ডের আওতায় পরিচালিত হবে। বে টার্মিনালের আওতায় তিনটি টার্মিনাল হবে। একটি মাল্টিপারপাস ও দুটি কনটেইনার টার্মিনাল। মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি নির্মাণ করার জন্য ভারত ৬৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ আকারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেবে। এই টাকা ১৪ বছরে ভারতকে পরিশোধ করার কথা রয়েছে। আর তা নির্মাণের পর একটি প্রাইভেট কোম্পানি পরিচালনা করবে। বাকি দুটি কনটেইনার টার্মিনালও পরিচালনার জন্য প্রাইভেট কোম্পানিকে দেয়া হবে। একইভাবে বে টার্মিনালের আদলে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মাণ হতে যাওয়া গভীর সমুদ্র বন্দরটিও ল্যান্ড লর্ডের আওতায় নির্মিত হবে।
ল্যান্ড লর্ডের আওতায় নির্মিত হলে কি সুবিধা পাওয়া যাবে জানতে চাইলে চিটাগং চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, সারা বিশ্ব এখন প্রাইভেটের দিকে ঝুঁকছে। এতে বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল এবং প্রতিযোগিতামূলক হবে। বন্দরের পণ্য হ্যান্ডেলিং অনেক দ্রুত হবে।
কিন্তু বন্দর পরিচালনার জন্য একটি কোম্পানিকে দিলে তারা ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতে পারে কিনা প্রশ্ন করা হলে বন্দরের সদস্য ( প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, যাতে জিম্মি করতে না পারে সেজন্যই আমরা বে টার্মিনালের তিনটি টার্মিনাল একটি কোম্পানিকে দিচ্ছি না। পৃথক পৃথক কোম্পানিকে বরাদ্দ দেয়া হবে পরিচালনার জন্য। এতে তাদের কাজের মধ্যে প্রতিযোগিতা আসবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম পোর্ট হলো টুল পোর্ট এবং মোংলা পোর্ট পাবলিক সার্ভিস পোর্ট। আধুনিক বন্দর হিসেবে গড়ে উঠার জন্য ল্যান্ড লর্ড পোর্ট বিশ্বে এখন আদর্শ। তবে করপোরেট পোর্ট ও প্রাইভেট পোর্টের কার্যক্রম আরো দ্রুত।
জাফর আলম বলেন, যে পোর্ট সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে সেসব পোর্টকে পাবলিক সার্ভিস পোর্ট বলা হয়। যে পোর্ট সরকার নির্মাণ করে দেয় এবং যন্ত্রপাতিও কিনে যুক্ত করে দেয় কিন্তু পরিচালিত হয়ে থাকে বেসরকারিভাবে সেসব পোর্টকে টুল পোর্ট বলা হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বন্দর একটি টুল পোর্ট।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত বছর প্রায় ২৪ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে। প্রতিবছর বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বাড়ছে। এই মুহূর্তে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে নতুন নতুন টার্মিনাল গড়ে তোলার বিকল্প নেই।
More News Of This Category