রায় নিয়ে যে কোনো ‘গঠনমূলক সমালোচনা’ আদালত স্বাগত জানাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সুপ্রিম কোর্টের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত আইন কমিশনের বক্তব্যের বিষয়ে আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্য আসে।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, “আমরা এতকাল জেনে এসেছি, দিস ইজ পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ, কিন্তু এ রায়ের পরে মনে হচ্ছে, উই আর নো লংগার ইন দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। উই আর রাদার ইন জাজেস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ।”
সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায়কে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ‘পূর্বধারণাপ্রসূত’ বলেছেন। সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণকে তিনি ‘অপরিপক্কতা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন আপিল বিভাগের সামনে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আইন কমিশনের চেয়ারম্যান দায়িত্বশীল পদে আছেন , তিনি এভাবে কথা বলতে পারেন না। আমরা বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার কথা বলছি।”
প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, “রায় ঘোষণার পর গঠনমূলক সমালোচনা যে কেউ করতে পারে। রায় হওয়ার পর আমরা গঠনমূলক সমালোচনা গ্রহণ করি। তা না হলে বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদের নেতা জয়নুল আবেদীন এ সময় বলেন, সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে যেসব কথা এসেছে তা ‘অবমাননাকর’।
প্রধান বিচারপতি এ সময় বলেন, “রায় নিয়ে কেউ রাজনীতি করবেন না। আপনারা আরও সচেতন হবেন, যাতে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে।”
জয়নুল আবেদীন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে রুল চাইলে আদালতে উপস্থিত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আওয়ামী লীগ নেতা শ ম রেজাউল করিম বলেন, সমিতি থেকে এ বিষয়ে কোনো রেজুলেশন হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান যা বলেছেন, তা ‘স্পষ্টভাবে অদালত অবমাননা’।
তিনি রুল চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমি অনুরোধ করব, আপনারা সংযত আচরণ করবেন। সরকার বা বিরোধী দল- কারও ট্র্যাপে আমরা পড়ব না। আমরা সচেতন। সাতজন বিচারপতি চিন্তা-ভাবনা করেই রায় দিয়েছে। রায় নিয়ে কেউ পলিটিকস করবেন না।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্যকে ‘অবমাননাকর’ বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, রায় নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করা যায়। ইতিহাসই একদিন বিচার করবে।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হয়েছিল ষোড়শ সংশোধনীতে। হাই কোর্ট গতবছর ওই সংশোধনী ‘অবৈধ’ ঘোষণা করার পর গত ৩ জুলাই আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে। এরপর ১ অগাস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।
৭৯৯ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।
আজ বৃহ:বার সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানানোর কথা রয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের।