দৃক নিউজ২৪, ডেস্ক:- এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ হিসেবে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’র অভিযোগ তুলেছে তারা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছেন বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) ও বর্তমান মহাপুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদও রয়েছেন।
গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে বাংলাদেশের ওপর এ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লেন ঢাকার কোনো কর্মকর্তা। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রীতিমতো আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত ওয়াশিংটনের? যে দেশটি বাংলাদেশকে তাদের অন্যতম প্রধান অংশীদার বলে দাবি করে, সেই যুক্তরাষ্ট্রই আচমকা নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপে গেলো কেন?
প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সাপ্তাহিক প্রতিবেদন লেখক মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক ধরে রাখতে আগ্রহী, তবে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আঘাত করেছে। বাংলাদেশের কিছু কর্মকর্তা এর প্রভাবকে পাত্তা না দিলেও অনেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের বরাতে গত দুই দশকে র্যাবের বিরুদ্ধে বেশ কিছু বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগ তুলে কুগেলম্যান বলেছেন, মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে এ বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা হয়তো ‘অর্থবহ’ ছিল, কিন্তু ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ততটা যুক্তিসঙ্গত লাগে না।
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব চায়, তাতে মনে হয়, তারা মানবাধিকার রেকর্ডকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে আগ্রহী নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০১৯ সালের এক নথিতে ঢাকার সঙ্গে সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ থেকে শুরু করে বাণিজ্যের কথা উল্লেখ রয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের তৎকালীন সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন কর্মকর্তারা। সে সময় মার্কিন সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছিলেন, দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে ‘গভীর অংশীদারত্ব’ রয়েছে। আর গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কেলি কেইডারলিং ঢাকা সফর করে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। অথচ তার কয়েক সপ্তাহ পরেই দেওয়া হয় এ নিষেধাজ্ঞা।
এর কারণ কী? কুগেলম্যানের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, বাইডেন প্রশাসন তার গণতন্ত্র প্রচারাভিযানে বাংলাদেশকে টার্গেট বানিয়েছে। এ জন্যই হয়তো গত সপ্তাহের গণতন্ত্র সম্মেলনে ঢাকাকে আমন্ত্রণ জানায়নি ওয়াশিংটন। কিন্তু এটি কেইডারলিংয়ের বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো নিয়ে বাংলাদেশকে সতর্ক করা। বাংলাদেশ এই মুহূর্তে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যদি মানবাধিকার নিয়ে টানাহেঁচড়া করতেই থাকে, তাহলে ঢাকা আরও বেশি বেইজিংমুখী হয়ে উঠতে পারে।
তবে ফরেন পলিসির এ বিশ্লেষকের মতে, র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যখ্যা হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে শুধু মানবাধিকার রক্ষার জন্য চাপ দিতে চায়, সম্পর্কচ্ছেদ করতে নয়। গত বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কে আগ্রহী এবং ওই দিনই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে ফোন করেছেন।
তবে ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। বাংলাদেশের কাছে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার অর্থ এমন একটি সংস্থার ওপর আঘাত, যা সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনায় অত্যন্ত সফল। কুগেলম্যানের মতে, পরিস্থিতি ভিন্ন হলে বাংলাদেশ হয়তো র্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতো; কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এই মুহূর্তে বাহিনীর বিষয়ে নেতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই।
More News Of This Category