দৃক নিউজ২৪ ডেস্ক:- কুরবানি মহান আল্লাহর হুকুম। সামথ্যবানদের জন্য তা ওয়াজিব। কিন্তু অনেকেই পশু জবাইয়ের পর আত্মত্যাগের এ ইবাদতে সামান্য সময় বাঁচাতে গিয়ে একটি ভুল কাজ করে থাকে। যার ফলে এ পশু জবাই বা কুরবানির পরিবর্তে তা হত্যায় পরিণত হয়। কী সেই ভুল? তা থেকে বাঁচার উপাই বা কী?
কুরবানি মহান আল্লাহ তাআলা নির্দেশ। তিনি কুরআনে এভাবে নির্দেশ দেন- ‘সুতরাং (আপনি) আপনার প্রভুর জন্য নামাজ পড়ুন এবং কুরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার : আয়াত ২)
আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এ ইবাদত পালনের সময় সামান্য একটি ভুলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে কুরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সে কারণে খুব সতর্কতার সঙ্গে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানি করা জরুরি।
কুরবানির পশু জবাইয়ের সময় অনেকেই একটি ভুল করে থাকেন। যে ভুলের কারণে কুরবানির পরিবর্তে তা হত্যায় পরিণত হয়। জবাইয়ের পর ১০/১৫ মিনিট সময় বাঁচাতেই এ ভুলটি করে থাকে।
কুরবানির পশু জবাই করার পর দ্রুত পশুর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরি বা চাকুর ধাঁরালো আগা/মাথা দিয়ে জবেহ করার স্থানের (ঘাড়ের মেরুদণ্ডের) ভেতর আঘাত করে। ফলে মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে পশুটি দ্রুত নিস্তেজ হয়ে যায়। এ কাজটি কোনোভাবেই ঠিক নয। এতে পশু কুরবানি না হয়ে তা হত্যায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তাই পশু জবাইয়ের পর ১০/১৫ মিনিট অপেক্ষা করলেই পশুটি নিস্তেজ হয়ে যায়। রক্তশূন্য হয়ে স্বাভাবিকভাবে মারা যায়। যা চামড়া ওঠানো ও গোশত প্রক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়।
আঘাতের ক্ষতি
জবাইয়ের ওই স্থানে মেরুদণ্ডে ছুরির আগা দিয়ে আঘাত করলে, অনেক সময় পশু স্বাভাবিক মৃত্যুর আগেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। তখন এটি আর কুরবানি হয় না বরং তা হত্যায় পরিণত হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতেও তা পশু জবাইয়ের সঠিক পদ্ধতি নয়।
মনে রাখতে হবে
যদি কোনো পশু ওই আঘাতে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায় তবে ওই ব্যক্তির কুরবানি আদায় হবে না। সে কারণে পশু জবাইয়ের পর ১০/১৫ মিনিট সময় অপেক্ষা করা উত্তম। কুরবানির পশু জবাইয়ের পর কোনোভাবেই এ ভুলটি করা যাবে না।
পশু জবেহের যে স্থানে তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়, সেটি মূলত- স্পাইনাল কর্ড বা ‘মেরুরজ্জু’-এর অংশ। ছুড়ির আঘাতে পশুর স্পাইনাল কর্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেই পশুর দেহ থেকে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পশুটি হার্ট অ্যাটাক করে এবং মারা যায়। তখন এটি জবাই সাব্যস্ত না হয়ে হত্যায় পরিগণিত হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও এ পদ্ধতিটি অত্যন্ত গর্হিত এবং বিপদজনক কাজ। কেননা স্পাইনাল কর্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সব রক্ত পশুর দেহ থেকে বের হতে পারে না। পশুর দেহের মাংশপেশিতেই রক্ত জমাট বেঁধে যায়। পশু শিরা উপসিরা থেকে পুরোপুরি রক্ত বের হতে না পারলে গোশত দুষিত হয়ে যায়।
পশুর এ দুষিত গোশত খেলে অনেক সময় ক্যান্সার, এইচবিএএসসহ অন্তত ১৮ ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে কুরবানির পশু জবাই সম্পন্ন করা জরুরি।
পশু জবাই করার সঠিক পদ্ধতি
কুরবানির পশুসহ যে কোনো পশু জবাই সম্পন্ন হওয়ার জন্য পশুর মূল ৩টি রগ কেটে দিতে হয়। ৩টি রগ কেটে দেয়া হলে পশুর দেহ থেকে সব রক্ত বের হয়ে যায়। রক্ত বের হয়ে যাওয়ার ফলে পশু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মারা যায়। আর এভাবে পশু জবাই করা উত্তম। ফলে কুরবানির পশু জবাই বাতিল বা হত্যায় পরিণত হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
সুতরাং কুরবানির পশু জবাই হোক নিরাপদ ও বিশুদ্ধ। তা নিরাপদ ও বিশুদ্ধ করতে জবাইয়ের পর পশুর দেহ থেকে সব রক্ত বের হওয়া পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা জরুরি। ফলে কুরবানি হবে বিশুদ্ধ আর কুরবানি পশুর গোশতও হবে খাওয়ার উপযুক্ত এবং ঝুঁকিমুক্ত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক উপায়ে কুরবানির পশু জবাই করার তাওফিক দান করুন। পশুকে অতিরিক্ত কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় ক্ষতি ও রোগ-বালাই থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
More News Of This Category