মোঃ হুমায়ূন কবীর ফরীদি#
ভাটি-বাংলার প্রাণপুরুষ একুশে পদক প্রাপ্ত প্রখ্যাত বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় আব্দুল করিমের নিজ বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলারউজানধল গ্রামে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে হাজার হাজার ভক্তদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে।
করিম ভক্ত আলীনূর জানান, শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত আলোচনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম।
আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে ভক্ত বৃন্দ ও বক্তারা বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশপাশি, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা অসংগতির কথা যেমন বলেছেন তেমনি বলেছেন প্রেম, ভালাবাস ও স্রষ্টার সৃষ্টি দর্শনসহ বিরহের। তিনি জীবদ্দশায় সমাজের নিপীড়িত অসহায় ও মেহনতী মানুষের জন্য গান রচনা করে গেছেন। তবে শাহ আব্দুল করিমের জীবন কাহিনী সমাপ্তি ঘটে দুঃখ দুর্দশার মধ্যে দিয়ে। তিনি দুঃখকে ভালবাসতেন। গরিব দুঃখী মেহনতি মানুষের কথাগুলোই ফুটিয়ে তুলতেন।
বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দিরাই উপজেলার বরাম হাওর পাড়ের উজানধল গ্রামের কালনী নদীর তীরে জন্মগ্রহণ করেন। নানা অভাব-অনটন, দুঃখ-দারিদ্রে মধ্যে বেড়ে ওঠা বাউল করিমের বয়স যখন ১২, তিনি রাখালের চাকরি ছেড়ে গ্রামের পার্শ্ববর্তী ধলবাজারের এক মুদির দোকানে কাজ নিলেন। শাহ আব্দুল করিম এক সময় সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওড় এলাকা চষে বেরিয়েছেন। আর কালে কালে মানুষের দুঃখ দুর্দশায় দেখে তা নিয়ে গান রচনা করে গেছেন। এই গানে যেমন আনন্দ ছিল তেমনি ছিল জীবন সংগ্রামের প্রেরণা। তিনি গ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাউলা গানে মেহনতী মানুষের অধিকার আদায়ের, আনন্দের, প্রেম, বিরহ, স্রষ্টার সৃষ্টি দর্শন নিয়ে গানগাইতে গাইতে পুরো ভাটি অঞ্চলে তাঁর নাম ছড়িয়ে যায়। তিনি ভাষার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রেরণা ও গণসংগীত গেয়ে গেয়ে লাখ লাখ তরুণকে উজ্জীবিত করেছেন। পেয়েছেন একুশে পদক। এই করিমই এক সময় নিয়তির কাছে হার মানেন। তাঁর জীবনের শেষ দিন বাড়ির বিছানায় ও হাসপাতালের বেডে কাটিয়ে গেছেন। ২০০৯ সালের ১২সেপ্টেম্বর পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও ভক্তদের কাছ থেকে চিরবিদায় নেন এ বাউল সম্রাট।
শাহ আব্দুল করিমের গানের মধ্যে দিয়ে তাকে খুঁজতে প্রতিদিন ভক্ত ও স্বজনরা গানের আসর বসান। তার গান গেয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা আর গানের মধ্যে তাঁকে বাচিয়ে রাখতেই সবার মাঝে তার গান ছড়িয়ে দিতে চান । আর সেই সাথে শাহ আব্দুল করিমের স্বপ্ন সংগীত নিকেতনটি চালু হলে ভক্ত ও শিষ্যদের গানের চর্চা আর আব্দুল করিমের গানের শুদ্ধ চর্চা হতো বলে জানান ভক্তরা।
শাহ আব্দুল করিমের ছেলে শাহ নুর জালাল বলেন, টাকা পয়সার অভাবে আব্দুল করিমের স্মৃতিগুলো ধরে রাখার জন্য সংগীতালয়টি সংস্কার করতে পারছেন না। প্রতি বছরই সবাই আশ্বাস দেন কিন্তু আশ্বাসের প্রতিফলন বাস্তবায়ন হয়নি। শাহ আব্দুল করিমের জাদুঘর ও সংগীতালয়টি নির্মাণের জন্য দাবি জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম বলেছেন হাওর অঞ্চলের সংস্কৃতি বিকাশের জন্য সরকার অনেক কাজ করে যাচ্ছে।
তারই অংশ হিসেবে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের নামে ইনস্টিটিউশনস্থাপনের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নকরার জন্য আমরা স্থান নির্বাচন করেছি। বিশেষ করে তিনি যে অঞ্চলে গড়ে উঠেছেন সেই অঞ্চলেই ইনস্টিটিউশন নির্মাণ করা হবে।
More News Of This Category