দৃক নিউজ২৪ ডেস্ক :- তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান অভিযোগ করেছেন, মিয়ানমার সেদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে।
ইস্তাম্বুলে ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেয়া এক বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট এরদোহান বলেন, “সেখানে গণহত্যা চলছে। যারা গণতন্ত্রের আবরণে এই গণহত্যার প্রতি চোখ বন্ধ করে আছে – তারা এর সহযোগী।”
এরদোয়ান বলেন তিনি এ মাসের শেষে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে এ বিষয়টি তুলবেন। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে তিনি ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের মহাসচিব ও অন্য মুসলিম নেতাদের সাথে কথা বলেছেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সাথেও কথা বলেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, এবং তিনি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এ ব্যাপারে বাংলাদেশের নেয়া পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেন।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অফিস বলছে, রাখাইন রাজ্যের সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪০০ লোক নিহত হয়েছে – যার অধিকাংশই রোহিঙ্গা মুসলিম।
রাষ্ট্রপতিকে এরদোগানের ফোন
সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির জন্য সমবেদনা ও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে তুরস্ক।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তায়িপ এরদোয়ান বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোন করে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যার ক্ষয়ক্ষতির জন্য তুরস্কের জনগণের আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন ও এযাবতকালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় এবং চলমান সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপসমূহের প্রশংসা করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ একথা জানানো হয়েছে।
টেলিফোনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুপ্রতীম সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বর্তমান মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিরাজমান পরিস্থিতি ও মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর চলমান নিপীড়ন ও মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের প্রতি তুরস্কের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে তিনি রাষ্ট্রপতিকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এবিষয়ে তুরস্ক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে অবহিত করেন। রোহিঙ্গা বিষয়ক সমস্যাটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের আলোচনায় উপস্থাপনে তুরস্কের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে বলেও আশ্বাস দেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তুরস্কের রাষ্ট্রপতিকে এবং তুরস্কের জনগণকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন আলাপ ও বাংলাদেশের প্রতি তাঁর সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি অত্যাচার ও দমন-পীড়নের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য ৩০ বৎসরেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সম্পর্কে অবহিত করে বলেন, সীমিত সম্পদ ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি-নীতি অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা মুসলিমদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অবস্থানের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পরিবেশগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ তাদের প্রতি খাদ্য, বাসস্থান, ওষুধ, শিক্ষা ও অন্যান্য সকল সুবিধাদি প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
তিনি অবিলম্বে সহিংসতা থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে মায়ানমারের সাধারণ নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং কাফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এ বিষয়ে তিনি ওআইসি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তুরস্কের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেন এবং তুরস্কের ভবিষ্যত সহায়তার অভিপ্রায়কে স্বাগত জানান।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে তিনি ভবিষ্যতে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশে সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং রোহিঙ্গা সমস্যায় তুরস্কের সমর্থন ও তার টেলিফোন কলের জন্য আবারো ধন্যবাদ জানান।
More News Of This Category