,
শিরোনাম
হযরত মাওলানা মরহুম এমদাদুর রহমান (রঃ) এর ঈসালে সাওয়াব উপলক্ষে মীলাদ ও দোআ মাহফিল এবং অসহায় গরীবদের মাঝে কাপড়  বিতরণ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর ২০২৩ শিক্ষা বর্ষের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ‌্যে পুরষ্কার বিতরণ ও আলোচনা সভা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জগন্নাথপুরে মামলা দায়ের বাতিল হতে পারে ১৫ আগস্টের সরকারি ছুটি ইন্টারনেট শাটডাউন: তদন্তে বেরিয়ে এলো যাদের নাম শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দুর্নীতির মামলা থেকে খালাস পেলেন ড. ইউনূস আমার মায়ের পদত্যাগের বিষয়ে দেয়া বিবৃতি পুরোপুরি মিথ্যা: জয় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলসহ উপদেষ্টা পরিষদের ৮ সিদ্ধান্ত প্রথম দিনেই তিন সিদ্ধান্ত নিলেন আসিফ মাহমুদ

কদমবুছি সর্ম্পকে জানতে পড়ুন

অধ্যক্ষ মাওলানা মঈনুল ইসলাম পারভেজ:- কদমবুছি একটি সুন্নাতী আমল, যা ইসলাম ধর্মের শুরু থেকে চলে আসা সুন্দরতম আদব কায়দার অন্যতম পন্থা । কদমবুছি ( ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ ) ইসলামী শরীয়তে কুতটুকু অনুমোদিত নিম্নে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত প্রমাণ দেয়া হল :
১নং হাদীস :
ﻋﻦ ﺍﻟﻮﺍﺯﻉ ﺑﻦ ﻋﺎﻣﺮ ‏( ﺭﺽ ‏) ﻗﺎﻝ : ﻗّﺪِﻣْﻦَ ﻓَﻘِﻴْﻞَ ﺫَﺍﻙَ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‏( ﺹ ‏) ﻓَﺎَﺧَﺬْﻧَﺎ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻭَ ﺭِﺟْﻠَﻴْﻪِ ﻧُﻘَﺒِّﻠَﻬَﺎ ‏( ﺑﺨﺎﺭﻱ / ﺍﻷﺩﺏ ﺍﻟﻤﻔﺮﺩ / ﺑﺎﺏ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ / ٤٤٦ ‏)
অর্থ: ওয়াযি’ ইবনে আমের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি একদা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে গিয়ে হাজীর হলাম, আমাকে বলা হল ইনিই হলেন আল্লাহর রাসুল । আমরা তখন তাহার হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে চুমু খেলাম । (ইমাম বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, অনুচ্ছেদ ৪৪৬, (তাক্ববিলুর রিজল), কদমবুছি বা পদচুম্বন) (৪) ২ নং হাদিস:
ﻦﻋِ ﺫﻛﻮﺍﻥ ﻋﻦ ﺻﻬﻴﺐ ﻗﺎﻝ ﺭَﺃﻳْﺖُ ﻋَﻠِﻴًّﺎ ﻳُﻘْﺒَﻞُ ﻳَﺪَ ﺍْﻟﻌَﺒَّﺎﺱِ ﻭَﺭِﺟْﻠَﻴْﻪ
অর্থ: হযরত যাকওয়ান রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত ছুহাইব রদ্বিয়াল্লাহু আনহ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুকে (স্বীয় চাচা) হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর হাত ও পা যুগল চুম্বন করতে দেখেছি । (ইমাম বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, অনুচ্ছেদ ৯৮৮, (তাক্ববিলুর রিজল), কদমবুচি বা পদচুম্বন এবং মিশকাত শরিফ । (৫) ৩নং হাদিস:
ﻋﻦ ﺯﺍﺭﻉ ﻭﻛﺎﻥ ﻓﻰ ﻭﻓﺪ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻘﻴﺲ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻗﺪﻣﻨﺎ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻭﺟﻌﻠﻨﺎ ﻧﺘﺒﺎﺩﺭ ﻣﻦ ﺭﻭﺍﺣﻠﻨﺎ ﻓﻨﻘﺒﻞ ﻳﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺭﺟﻠﻪ
অর্থ: হযরত যারেঈ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ যিনি আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, তিনি বলেন, আমরা যখন মদীনা শরীফে আগমন করলাম তখন আমাদের বাহন হতে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম এবং রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাত ও পা মোবারক চুম্বন করলাম । (আবূ দাউদ, হাদিস নং ৫২২৪, ৩য় খন্ড, ৪ নং অধ্যায় । (৬) ৪নং হাদিস:
ﻋﻦ ﺻﻔﻮﺍﻥ ﺑﻦ ﻋﺴﺎﻝ ﺍﻥ ﻗﻮﻣﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻴﻬﻮﺩ ﻗﺒﻠﻮﺍ ﻳﺪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺭﺟﻠﻪ
অর্থ: হযরত ছাফওয়ান বিন আসসাল রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই ইয়াহুদীদের একটি গোত্র হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাত ও পা মোবারক চুম্বন করেন । (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭০৫, ৫ম খন্ড, ১৬ নং অধ্যায়, পৃ: ৩২। (৭) ৫নং হাদীস:
হযরত বুরাইদা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-
ﺳﺄﻝ ﺃﻋﺮﺑﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻳﺔ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﻗﻞ ﻟﺘﻠﻚ ﺍﻟﺸﺠﺮﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺪﻋﻮﻙ ﻓﻘﺎﻝ ﻓﻤﺎﻟﺖ ﺍﻟﺸﺠﺮﺓ ﻋﻦ ﻳﻤﻴﻨﻬﺎ ﻭﺷﻤﺎﻟﻬﺎ ﻭﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﻭﺧﻠﻔﻬﺎ ﻓﻘﻄﻌﺖ ﻋﺮﻭﻗﻬﺎ ﺛﻢ ﺟﺎﺀﺕ ﻳﺘﺨﺬ ﺍﻻﺭﺽ ﺗﺠﺮ ﻋﺮﻭﻗﻬﺎ ﻣﻐﺒﺮﺓ ﺣﺘﻰ ﻭﻗﻌﺖ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻯ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛﻢ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻴﻚ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻻﻋﺮﺍﺑﻰ ﻣﺮﻫﺎ ﻓﻠﺘﺮﺟﻊ ﺍﻟﻰ ﻣﻨﺒﺘﻬﺎ ﻓﺮﺟﻌﺖ ﻓﺪﻟﺖ ﻋﺮﻭﻗﻬﺎ ﻓﺎﺳﺘﻮﺕ ﻓﻘﺎﻝ ﺍﻻﻋﺮﺑﻰ ﺍﺋﺬﻥ ﻟﻰ ﺍﺳﺠﺪ ﻟﻚ ﻗﺎﻝ ﻟﻮ ﺃﻣﺮﺕ ﺍﺣﺪﺍ ﺍﻥ ﻳﺴﺠﺪ ﻻﺣﺪ ﻻﻣﺮﺕ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﺍﻥ
ﺗﺴﺠﺪ ﻟﺰﻭﺟﻬﺎ ﻗﺎﻝ ﻓﺄﺫﻥ ﻟﻰ ﺍﻥ ﺍﻗﺒﻞ ﻳﺪﻳﻚ ﻭﺭﺟﻠﻴﻚ ﻓﺎﺫﻥ ﻟﻪ
অর্থাৎ, একজন বেদুঈন হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে মুজিযা দেখতে চাইল, হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদুঈনকে এরশাদ করলেন ওই বৃক্ষটাকে বলো আল্লাহর রসূল তোমাকে ডাকছেন, সে যখন বললো বৃক্ষ তার ডানে-বামে, সম্মুখে পেছনে ঝুকল তখন ওটার শিকড়গুলো ভেঙ্গে গেল । তারপর তা মাটি খোদাই করে শিকড়গুলো টেনে বালি উড়িয়ে হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মুখে এসে দাড়াল এবং বলল আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ ! বেদুঈন বললো “আপনি তাকে আদেশ করুন যেন এটা ওখানে (উৎপত্তিস্থল) ফিরে যায়” তাঁর নির্দেশে ওটা ফিরে গেল এবং তার শেকড়গুলোর উপর গিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো । বেদুঈন বললো “আমাকে অনুমতি দিন আমি আপনাকে সিজদা করবো” তিনি এরশাদ করলেন, “যদি কাউকে সিজদাহ করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীকে আদেশ দিতাম সে যেন তার স্বামীকে সিজদাহ করে ।” বেদুঈন লোকটি আরজ করলো “হুযুর তাহলে আমাকে আপনার হস্ত ও পদদ্বয় মোবারক চুম্বন করার অনুমতি দিন” তিনি (নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অনুমতি প্রদান করলেন । (শিফা শরিফ) তিরমিযি, কিতাবুল আদাব, হাদিস নং ৩১৫৫, অধ্যায় ১৮ । আহমদ ১৮৮১৪. (৮) ৬ নং হাদীস :
ﺭﻭﻯ ﻋﻦ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﺒﻞ ﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭﻳﻘﻮﻝ ﺍﺟﺪ ﻣﻨﻬﺎ ﺭﻳﺢ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻗﺒﻞ ﺍﺑﻮ ﺑﻜﺮ ﺭﺃﺱ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﻦ ﻗﺒﻞ ﺭﺟﻞ ﺍﻣﻪ ﻓﻜﺎﻥ ﻗﺒﻞ ﻋﻨﺒﺔ ﺍﻟﺠﻨﺔ
অর্থ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, হযরত ফাতেমা (নবীজীর স্নেহের কন্যা) রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহাকে চুমু খেতেন আর তিনি বলতেন আমি ফাতেমা রদ্বিয়াল্লাহু আনহার কাছ থেকে বেহেশতের সুঘ্রান পাচ্ছি । হয়রত আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হযরত আয়েশা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহার মাথা মোবারক এ চুমু খেয়েছেন । আর প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি তার মায়ের পা চুম্বন করবে সে যেন বেহেশতের চৌকাটে চুমু খেল । (আবু দাউদ মাধ্যমে মাবসুত লিস সারাখছি, খন্ড-১০, পৃষ্ঠা: ১৪৯ । (৯)
কদমবুছির শরয়ী অনুমোদনে ফোক্বাহায়ে কেরাম ও মুহাদ্দিসীনে ই’জামদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য :
(১): রদ্দুল মোহতার গ্রন্থকার বলেন-
ﻗﺎﻝ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﺍﻟﻌﻴﻨﻰ ﺑﻌﺪ ﻛﻼﻡ ﻓﻌﻠﻢ ﺍﺑﺎﺣﺔ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﻴﺪ ﻭﺍﻟﺮﺟﻞ ﻭﺍﻟﺮﺃﺱ ﻛﻤﺎ ﻋﻠﻢ ﻣﻦ ﺍﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﻤﺘﻘﺪﻣﺔ ﺍﺑﺎﺣﺘﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺠﺒﻬﺔ ﻭﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﻴﻨﻴﻦ ﻭ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻪ ﺍﻟﻤﺒﺮﺓ ﻭﺍﻟﻜﺮﺍﻡ
অর্থ: আল্লামা আইনী বলেন দীর্ঘ আলোচনায় প্রমাণিত হলো যে, হাত চুম্বন, কদমবুছি, মাথাবুছি ইত্যাদির বৈধতা প্রমানিত হলো । যেভাবে বর্ণিত হাদীস হতে কপালে, দুই চোখের মাঝে চুমু দেয়ার বৈধতা প্রমাণিত হল, তবে এ সকল ক্ষেত্রে চুম্বন তখন জায়েয যখন সম্মান ও বরকত হাসিল উদ্দেশ্য হয় । (১০) (২): বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফতহুল বারী’ এর মধ্যে আল্লামা ইবনে হাজর আল আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻳﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺟﻮﺍﺯ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﻴﺪ ﻭﺍﻟﺮﺟﻞ – ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻻﺑﻬﺮﻯ ﺍﻧﻤﺎ ﻛﺮﻫﻬﺎ ﻣﺎﻟﻚ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻟﺘﻜﺒﺮ ﻭﺍﻣﺎ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻧﺖ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻪ ﺍﻟﺘﻘﺮﺏ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻟﺪﻳﻨﻪ ﺍﻭﻟﻌﻠﻤﻪ ﺍﻭ ﻟﺸﺮﺍﻓﺘﻪ ﻓﺎﻥ ﺫﺍﻟﻚ ﺟﺎﺋﺰ –
অর্থ: (তিনি বলেন) হাদীস শরীফ দ্বারা হাতবুছি ও কদমবুছির বৈধতা ও অনুমোদন প্রমাণিত তবে ইমাম মালেক ও ইমাম আবহারী রাহমাতুল্লাহি তা’য়ালা আনহুমা এগুলোকে মাকরুহ বলেছেন এই শর্তে যে যদি তা বড়ত্ব/আহমিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য হয় । কিন্তু যদি আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্যবান বান্দা বা জ্ঞানগত সম্মান ও মর্যাদার কারণে হয় তাহলে উহা নিঃসন্দেহে জায়েয এবং উত্তম । (১১) (৩) বুখারী শরীফে মুকাদ্দামায় আল্লামা আহমদ আলী সাহারানপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন-
ﻗﺎﻝ ﺟﺎﺀ ﻣﺴﻠﻢ ﺑﻦ ﺍﻟﺤﺠﺎﺝ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ ﻓﻘﺒﻞ ﺑﻴﻦ ﻋﻴﻨﻴﻪ ﻭﻗﺎﻝ ﺩﻋﻨﻰ ﺍﻗﺒﻞ ﺭﺟﻠﻴﻚ ﻳﺎ ﺍﺳﺘﺎﺫ ﺍﻻﺳﺘﺎﺫﻳﻦ ﻭﻳﺎ ﺳﻴﺪ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ ﻭﻳﺎ ﻃﺒﻴﺐ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻰ ﻋﻠﻠﻪ –
অর্থ: একদা হযরত ইমাম মুসলিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সাক্ষাৎ পানে ধন্য হওয়ার জন্য আগমন করে ইমাম বুখারীর উভয় চোখের মাঝখানে চুম্বন করলেন, অত:পর তিনি ইমাম বুখারীকে সম্বোধন করে বললেন, হে শিক্ষককূল শিরমণি ! মূহাদ্দিসগণের সম্রাট ও হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার কারণসমূহ অনুসন্ধানে ডাক্তারের ভূমিকা পালনকারী সম্মানিত ও পবিত্র সত্ত্বা, আমাকে একটু মেহেরবানী করে আপনার পদযুগল চুম্বন করে ধন্য হওয়ার সুযোগ দিন । (মুকাদ্দামাতু সহিহীল বুখারী) । (১২)
(৪). পাক ভারত উপমহাদেশের সর্বজন স্বীকৃত অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দিসে দেহলভীর অভিমতঃ
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺤﻖ ﺍﻟﻤﺤﺪﺙ ﺍﻟﺪﻫﻠﻮﻯ : ﻭﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺟﻮﺍﺯ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﺮﺟﻞ –
অর্থ: হযরত শায়খ এ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশিষ্ট সাহাবী হযরত জারে রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত কদমবুছি অনুমোদিত হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, (মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি চিত্তে) বুর্জগানে দ্বীন ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের পদযুগল চুমু দেয়ার বৈধতা অত্র হাদীস দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত । বিশুদ্ধ হাদীস শরীফ, সাহাবায়ে কেরামের আমল ও বিশ্ব বরেন্য ওলামায়ে কেরাম-এর অভিমত ও আমল দ্বারা প্রমাণিত হল হাত ও কদমবুছি শুধু জায়েয নয়’ বরং সুন্নাত । পরিশেষে বলতে হয় যে, কদমবুছি সার্বজনীনভাবে সবাইকে নয় বরং মুত্তাকি পরহেজগার বুজুর্গ লোকদের বিশেষ করে মা- বাবা, শিক্ষকমন্ডলী, পীর-মাশায়েখ, বুজুর্গানে দ্বীনকে করা বৈধ ও উত্তম একটি সুন্নাতী আমল । এতে শ্রদ্ধা, সম্প্রীতি, স্নেহ, মমতা ও ভালবাসা বৃদ্ধি পায় । তবে এ ক্ষেত্রে জেনে রাখা জরুরী যে, পুরুষ ও মহিলাগণ পরষ্পর যাদের সামনে বের হওয়া জায়েয নয় তাদের দস্তবুছি বা কদমবুছি করাও জায়েয নয় । আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাঁর রাসূলের শেখানো আদর্শ পুরোপুরিভাবে অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন, আমীন ।
তথ্যসূত্র :-
১. সূরা আলে ইমরান. ৩:১৯ ।
২: মুসনাদে আহমদ/মিশকাত ।
৩: আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ পৃ- ৪৩২-৪৩৩ ।
৪. ইমাম বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, অনুচ্ছেদ ৪৪৬, (তাক্ববিলুর রিজল), কদমবুচি বা পদচুম্বন ।
৫. ইমাম বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ, অনুচ্ছেদ ৯৮৮, (তাক্ববিলুর রিজল), কদমবুচি বা পদচুম্বন । এবং মিশকাত ।
৬. আবূ দাউদ, হাদিস নং ৫২২৪, ৩য় খন্ড, ৪ নং অধ্যায় ।
৭. ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩৭০৫, ৫ম খন্ড, ১৬ নং অধ্যায়, পৃ: ৩২ ।
৮. শিফা শরীফ, দালাইলুন্নুবয়্যাহ আবু না’ঈম, পৃষ্ঠা- ৩৩২ । তিরমিযি, কিতাবুল আদাব, হাদিস নং ৩১৫৫, অধ্যায় ১৮ । আহমদ ১৮৮১৪.
০৯. আবু দাউদ মাধ্যমে মাবসুত লিস সারাখছি, খন্ড-১০, পৃষ্ঠা: ১৪৯ ।
১০. রদ্দুল মোহতার, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা- ৩৮০ ।
১১. ফতহুল বারী শরহে বুখারী, খন্ড- ১১তম, পৃ: ৫৭ ।
১২. মুকাদ্দামাতু সহিহীল বুখারী, পৃষ্ঠা- ৩ ।

লেখক, পি এইচ ডি গবেষক, অধ্যক্ষ হলিয়ার পাড়া ফাযিল মাদ্রাসা, জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ ।

     More News Of This Category

ফেসবুকে আমরা

 

 

নামাজের সময়সূচী

  • ফজর
  • যোহর
  • আছর
  • মাগরিব
  • এশা
  • সূর্যোদয়
  • ভোর ৪:৪৪
  • দুপুর ১১:৪৮
  • বিকাল ৩:৫৫
  • সন্ধ্যা ৫:৩৬
  • রাত ৬:৫০
  • ভোর ৫:৫৬