মোঃ হুমায়ূন কবীর ফরীদি#
অতি বর্সন আর উজান থেকে দোয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে চলমান আক্সিম বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারা, দিরাই,শাল্লা ও জগন্নাথপুর উপজেলাসহ সবকটি উপজেলার পানি বন্দী শত শত পরিবারের লোকজন ঘর বাড়ী হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর, শাল্লা, দিরাই, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধরমপাশাসহ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের সাথে আলাপ করে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। আবার গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক ও জামালগঞ্জ উপজেলায় ১৮ হাজার ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। পাঁচ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের ভূঁইয়ার হাটি গ্রামের পনেরটি বাড়িঘর গেছে নদীর গর্ভে। আরও ভাঙনের পথে ঘরবাড়ি।
জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া, চিলাউড়া হলদিপুর আশার কান্দী ও পাইল গাও ইউনিয়ন ও রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ঘর বাড়ী ভেঙ্গে পড়েছে। ঘরহারা এসব মানুষ বলছেন, ঋণ করে হাওরের ধান চাষ করেন তাঁরা। গেল চৈত্র মাসে বাঁধ ভেঙে সেই ফসল গেছে পানিতে তলিয়ে। আর ঘর হারিয়ে এখন কী করবেন, তা ভাবতেই পারছেন না। অবশ্য ঘরহারা এসব মানুষকে সরকারি সহায়তায় আবার ঘর তৈরি করে দেওয়ার কথা জানালেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম।
জেলা প্রশাসকের ভাষ্যমতে, যেসব মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে, এর তালিকা হচ্ছে। এসব ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের ভূঁইয়ার হাটি গ্রামের পনেরটি বাড়িঘর গেছে নদীর গর্ভে। আরও ভাঙনের পথে ঘরবাড়ি।
চলতি বছর জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়। এর মধ্যে ১৫৪টি হাওরের ধান তলিয়ে যায় পানিতে। সরকারি তথ্য বলছে, পাহাড়িঢল ও অতিবৃষ্টিতে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়। আর হাওরের পানিদূষণে মারাগেছে ১ হাজার ২৭৬ টন মাছ। যে মাছের মূল্য প্রায় ৪১ কোটি টাকা। হাওর অঞ্চলের লোকেরা ঢেউকে বলে আফাল। জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলো আঁটি নামে পরিচিত। আঁটি হলো বিপুল জলরাশির মধ্যে একখণ্ড জমি। যেখানে ৫ থেকে ৫০টি পরিবার বসবাস করে থাকে। বর্ষাকালে প্রায় প্রতিবছরই নদী আর হাওরের ঢেউয়ে বাড়িঘরে ভাঙন দেখা দেয়। এবারও হাওর এলাকায় ভেঙেছে ঘরবাড়ি। হাওরের ফসলডুবির পরপরই ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন’—নামের একটি সংগঠন ফসলহারা মানুষের পক্ষে আন্দোলন করে আসছে। সংগঠনটির আহ্বায়ক বজলুল মজিদ চৌধুরী বলছেন, ফসলডুবির পর সুনামগঞ্জে অন্তত ৫০০ জন ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এলাকায় নতুন করে বন্যা আঘাত এনেছে। এতে ঘরহারা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এটা বাড়তেই থাকবে। এসব মানুষের পুনর্বাসন দরকার। এমনিতে তাদের ঘরে এখন খাবার নেই। তারপর ঘরবাড়ি না থাকায় এসব মানুষ বড় বিপদে আছেন। বন্যা কবলিত ঘরবাড়ী হারা হাওর পাড়ের মানুষ সরকারের সু দৃষ্টি কামনা করছেন।