নিজস্ব প্রতিবেদক:- বিশাল টিলার অর্ধেক প্রায় কাটা শেষ। রাত-দিন যন্ত্রদানব এস্কেভেটরের (ভেকুমেশিন) খাবলায় ছিন্ন-ভিন্ন হচ্ছে টিলার বুক। সবুজ ঘাসের নিচে লাল মাটির গভীরতা। ‘মুক্তিযোদ্ধার টিলা’ নাম হলেও এর মাটি দিয়েই ভরাট চলছে শাহ্জালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লি:-এর ‘কলাবাগান আবাসিক এলাকা’। গত ১৫ দিনে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ ট্রাক মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ডিএম ফায়ছলের নেতৃত্বে টিলা কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ থাকলেও তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
উত্তরভাগ ইউনিয়নের ইন্দেশ্বর ভূমি অফিসের অধীনে এ ইউনিয়নের খাসমহল যাদুরগুল এলাকার জমি। যাদুরগুল খাসমহলে ২ হাজার একরেরও বেশি জমি সরকারের ‘ক’ খতিয়ানভুক্ত। শাহ্জালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লি:-এর বেশির ভাগ জমি রাজনগর উপজেলার আওতাধীন। এ সার কারখানার আবাসিক এলাকার নিচু জমি ভরাটের জন্য কাটা হচ্ছে টিলার মাটি। আবাসিক এলাকার পার্শ্ববর্তী ‘মুক্তিযোদ্ধা তাহের আলীর টিলা’ নামের এ টিলা স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও নির্মাণ কোম্পানিগুলোর লোকজন কেটে নিচ্ছে। এদের ভয়ে কেউ কিছু বলছে না। টিলার উপরে বসবাসকারী ব্যক্তিরাও রয়েছেন ঝুঁকির মুখে। যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে তাদের বাড়িঘর। যাদুরগুল খাসমহল এলাকায় বসবাসকারী ভূমিহীনদের করা হাইকোর্ট ও জজ কোর্টে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। এসব মামলায় এ এলাকায় সব ধরনের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এস্কেভেটর দিয়ে টিলার মাটি কেটে ১০/১২ টি ট্রাক্টরে লোড করা হচ্ছে। আলাপকালে স্থানীয়রা জানান, গত ১৫ দিনে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ ট্রাক মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। প্রতিট্রাক মাটি দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করছে সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে টিলার নিম্নাংশ কেটে ফেলায় উপরে বসবাসকারী ১৩টি পরিবার হুমকির মুখে।
এদিকে সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি ডিএম ফায়ছলের নির্দেশে টিলা কাটা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানালেও তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমরা মাটি ক্রয় করছি। যারা ট্রাক্টরের মালিক তারাই মাটি সাপ্লাই দিচ্ছেন। কিভাবে আনছে কোথা থেকে আনছে জানতাম না। আমি গত শুক্রবার শুনার পর টিলার মাটি সাপ্লাই দিতে নিষেধ করেছি।
ওই এলাকার বাসিন্দা ভূমিহীন সমবায় সমিতি লি:-এর সদস্য সচিব বিলাল হোসেন মিন্টু বলেন, প্রভাবশালীরা জোর করে টিলা কেটে নিচ্ছেন। বাধা দিলে বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। টিলার উপরে বসবাসকারীরা হুমকির মুখে রয়েছেন। টিলার নিচের মাটি কটে ফেলায় যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে টিসা। আমরা ভয়ে আছি।
এ ব্যাপারে শাহ্জালাল সারকারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুল হক বলেন, বিষয়টি জানা নেই। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে তিনি সারকারখানার জিএম (প্রশাসন)কে পদক্ষেপ নিতে বলেছেন বলে জানান।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুজ্জামান পাভেল মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখছি।